নিজস্ব প্রতিবেদক: দেখতে দেখতে নয় বছর পেরিয়ে গেলো। ভয়ঙ্কর সেই ঘটনাটি এখনও দেশবাসীকে নাড়া দেয়। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সব শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনার আজ নয় বছর।
সেদিনটি ছিল রমজান মাস। গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি হলি আর্টিজান বেকারি নামে পরিচিত ছিল। দোতালা বাড়ির চারদিকে সবুজ ঘাসের ওপর চেয়ার-টেবিলে সান্ধ্য পরবর্তী সময়ের আড্ডায় মেতে ওঠেন দেশি-বিদেশিরা। রাত ৯ টার দিকে একদল যুবক হলি আর্টিজানে প্রবেশ করে বিদেশি নাগরিক খুঁজতে থাকে। এরই মধ্যে মুহুর্ম মুর্হুমু গুলিতে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। রেস্তোরার লনে যারা বসে ছিলেন তারা দ্বিগবিদ্বিগ ছোটাছুটি করতে থাকেন। এরপর থেমে থেমে গুলির শব্দ। রাতের মধ্যে এই হত্যাযজ্ঞে জঙ্গিদের হাতে ৯ জন ইটালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি নাগরিক, ১ জন ভারতের নাগরিক, ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৩ জন নিহত হন।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডার বোল্ড অভিযানে নিহত হয় রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মোবাশ্বীর, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল। ঘটনার পর গুলশান থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। চার বছর তদন্ত শেষে পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়। এদের মধ্যে খালেদ ও রিপনকে পলাতক দেখানো হয়। বাকিদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যাদের নামে চার্জশিট দেয়া হয় তাদের মধ্যে বড় মিজানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। বাকি সাত জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলাটির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।
রায়ে আদালত বলেন, হামলাটি ছিল নির্মম, নৃশংস ও জঘন্য। জঙ্গিদের আচরণ, ঘটনাস্থলে তাদের বর্বরতা এবং এর ফলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ক্ষতি বিবেচনায় এই সাজা দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র যাবজ্জীবন নয়, বরং আমৃত্যু কারাদণ্ডই এই অপরাধের জন্য উপযুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধি, আসলাম হোসেন, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।
হামলার ঘটনার দুই বছর পর গুলশান ২ নম্বরে ৭৯ নম্বর রোডের সেই বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। বাড়ির প্রবেশ পথে একটি শোকবেদী নির্মাণ করা হয়। সেখানেই প্রতিবছর সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। এছাড়া ইটালি, জাপানসহ বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করার জন্য সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়। জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার তৎকালীন ওসি সালেহ উদ্দিনকে স্মরণ করতে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেখানে সমবেত হয়ে শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার স্মরণে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেই।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available