আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আট বছর আগের এক জনসভায় নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কে বিরোধীদের কটাক্ষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘ওঁদের ভয় কালো টাকা হারানোর। কিন্তু আমার তো ভয় নেই।’ কেন নেই? তার কারণ ব্যাখ্যা করে মোদি বলেছিলেন, ‘হাম তো ফকির হ্যায়। ঝোলা লেকে চলে যায়েঙ্গে।’ সেই ‘ফকির’ প্রধানমন্ত্রী ১৪ মে বুধবার তাঁর ঝোলাটি উপুড় করেছেন নির্বাচন কমিশনের সামনে। দেখা যাচ্ছে ‘ফকির’ মোদি আদতে ততটাও ফকির নন। বরং কোটিপতি। স্থাবর সম্পত্তি না থাক, স্রেফ ব্যাঙ্কেই তাঁর কয়েক কোটি টাকা জমেছে।
আগামী ১ জুন বারাণসীতে ভোট। মোদি বারাণসীতেই বিজেপির প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের নিজের যোগ্যতা, সম্পত্তি, আয়কর রিটার্ন, ঋণ (থাকলে) এবং অপরাধের ইতিহাস (থাকলে)-এর বিশদ হলফনামার মাধ্যমে জানাতে হয় কমিশনের কাছে। ১৩ মে সোমবার দেশটির চলমান পার্লামেন্ট নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটের প্রার্থী হিসেবে মোদিও নিজের হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাতেই প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর সম্পত্তির বিস্তারিত হিসাব।
হলফনামায় মোদি জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই। যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সরকারি বাংলোয় থেকেছেন। ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত নয়াদিল্লির ৭, লোক কল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবনে থাকেন। যদিও মোদির ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের হলফনামা বলছে, গুজরাতের গান্ধীনগরে তাঁর একটি বাড়ি ছিল। পাঁচ বছর আগে সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের সেই বাড়ির দাম ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। মোদি জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি। ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমমন্ত্রী হওয়ার পরে কিনেছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের হলফনামায় ওই বাড়ির উল্লেখ থাকলেও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ওই বাড়িটি তিনি বিক্রি করেছেন কি না, তারও উল্লেখ নেই হলফনামায়।
২০১৯ সালের হলফনামা বলছে মোদির মোট অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ৪১ লক্ষ ৩৬ হাজার ১২০ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে। মোদির সাম্প্রতিক হলফনামা বলছে, পাঁচ বছরে ওই অ্যাকাউন্টেই মোদির জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কে মোদির একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা। আরও একটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৭০০০ টাকা এবং স্থায়ী আমানত হিসাবে রয়েছে ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৩৮ টাকা।
২০১৯ সালের হলফনামা অনুযায়ী মোদির জীবন বিমার পলিসি ছিল ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৪৭ টাকার। এ ছাড়া তাঁর নামে কেনা ছিল কিছু শেয়ারও। ছিল ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৬৬ টাকার ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট। ২০২৪ সালের হলফনামায় অবশ্য বিমা বা শেয়ারের কোনও উল্লেখ নেই। মোদির ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটের জমার অঙ্ক শুধু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৮ টাকা।
তবে মোদির ঘোষণা মতো তাঁর আয়ের সূত্র দু’টিই। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর বেতন এবং ব্যাঙ্কে জমা অর্থ থেকে আসা সুদ। মোদি হলফনামায় জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮০ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি। ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৭৯ টাকা আয়কর দিয়েছেন সেই উপার্জনের ভিত্তিতেই।
এ ছাড়া মোদির হাতে নগদ রয়েছে ৫২ হাজার ৯২০টাকা। ৪৫ গ্রাম ওজনের চারটি সোনার আংটিও রয়েছে, যার মূল্য ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৫০ টাকা। সব মিলিয়ে ৩ কোটি ২ লক্ষ টাকা ৬ হাজার ৮৮৯ টাকার সম্পত্তি রয়েছে মোদির।
কিছু স্থাবর সম্পত্তি ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তবে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকায় বেতনের টাকা সুদ মিলিয়ে অনেকটাই জমেছে। তবে হিসাব বলছে, ওই দুই ক্ষেত্র ছাড়াও কিছু টাকা এসেছে। হতে পারে সেটা অতীতের সম্পত্তি বা বিনিয়োগ থেকে এসেছে। সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available