চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ করে শিল্পপণ্য ও বাণিজ্য মেলার স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলছে। মাসব্যাপী অনুষ্ঠেয় মেলাটির জন্য খেলার মাঠজুড়ে বানানো হচ্ছে ইট-সিমেন্টের স্থাপনা। ফলে মেলা শেষেও মাঠটি খেলাধুলার অনুপযোগী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক-বর্তমান খোলোয়াড় ও সচেতন মহল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে শিল্পপণ্য ও বাণিজ্য মেলা। মেলার কার্যক্রম বর্ণিল করতে ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মেলার অবকাঠামো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। মেলাটির আয়োজন করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। এ কার্যক্রম চলবে মে মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত। বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন অ্যান্ড জামদানি সোসাইটি এ মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে।
২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে খেলার মাঠেই ঢুকতেই দেখা গেল মেলায় দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত প্রধান ফটকের নির্মাণকাজ। ইট-সিমেন্ট দিয়ে বানানো হয়েছে আরও বিভিন্ন স্থাপনা। টিনের ছাউনি করে বসানো হচ্ছে স্টল। খেলার মাঠের মধ্যেই দৃষ্টিনন্দের জন্য বানানো হচ্ছে পানির ফোয়ারা। এছাড়া বিনোদনের জন্য চরকি, নাগোরদোলাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মাঠের একপাশে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁকা শৌচাগারও।
সচেতন নাগরিকরা জানান, একদিকে যেমন খেলার মাঠ রক্ষা করা প্রয়োজন। অপরদিকে মানুষের বিনোদনেরও প্রয়োজন আছে। তবে খেলার মাঠে মেলার আয়োজন করা মোটেই উচিত হয়নি। এতে করে মাঠটিতে থাকা অবকাঠামো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মেলা পরবর্তী সময়ে ক্রীড়া কার্যক্রমে অনুপযোগী হয়ে পড়বে। মহানন্দা নদীর আশপাশের ফাঁকা জায়গায় মেলা স্থান নির্বাচন করা উচিত বলে মনে করেন তারা। এতে করে খেলার মাঠও রক্ষা পাবে। অপরদিকে দ্বিতীয় মহানন্দা সেতু সংলগ্ন এলাকায় মেলাটির আয়োজন করা গেলে মানুষ সেখানে যাবেন। কেনাকাটা করার পাশাপাশি বিনোদনও পাবেন।
খেলার মাঠে মেলার আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রীড়া সংগঠকসহ খেলোয়াড়েরা। তারা বলছেন, ইট-সিমেন্ট দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় খেলার মাঠটির এখন বেহালদশা। মেলা শেষে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়া হলেও দীর্ঘদিন মাঠটি খেলাধুলোর অনপুযোগী হয়ে থাকবে। খেলার মাঠটিতে বাণিজ্য মেলার আয়োজন বন্ধ করার দাবি জানান তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি নিয়ে স্টেডিয়ামে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে চেম্বার অব কর্মাস। সেজন্য পুরাতন স্টেডিয়ামটিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য ইট ফেলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার বুকেই ইট পড়ছে। আমাদের কোন কিছু করার নেই। যদি কিছু করার থাকত তাহলে মেলাটি বন্ধ করে দিতাম। তারপরেও চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জনকে দিয়ে বলেয়েছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মাঠটি যে অবস্থায় ছিল, সেটি আর আগের অবস্থায় নেয়া সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন সাবেক এই ফুটবলার।
সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া প্রশিক্ষক শামসুল আলম বলেন, শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে আমরা নিয়মিতই ফুটবল খেলার অনুশীলন করাতাম। মেলার আয়োজন কারায় প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের আরেকটি স্টেডিয়ামে অনুশীলনে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে। আমরা চাই খেলার মাঠে মেলার আয়োজন না হোক।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়ে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় খেলার মাঠটি সংস্কারের জন্য আলাদাভাবে জামানতও নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খেলার মাঠটি সংষ্কার করে দিলে আমরা জামানত ফেরত পাব। খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, তারা যাতে মেলা চলাকালীন এক মাস পাশের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ও হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুশীলন করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেই অবস্থায় মাঠ নিয়ে মেলার আয়োজন শুরু করেছিলাম, তার চেয়ে ভালো অবস্থায় ফেরত দিব। এত বড় আয়োজন করতে গিয়ে একটু ক্ষতি হবে, এটা মেনে নিতেই হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, খেলাধুলা ও শিল্পবাণিজ্য দুটোই আমাদের প্রমোট করতে হয়। মেলার বিষয়ে কেউই কোন অভিযোগ করেনি। ক্রীড়া সংস্থার সকল সদস্যদের সঙ্গে সভা করে মেলার বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available