মুর্তুজা হাসান নাহিদ : মোটরবাইক হাঁকিয়ে পাহাড়-পর্বত ঘুরে বেড়ানোই যাদের নেশা। কেউ চাকুরিজীবী আবার কেউ ব্যবসায়ী কিংবা শিক্ষার্থী, সব শ্রেণির পেশার লোকজন আছে এই সংগঠনে। বলছিলাম গাজীপুরের শ্রীপুর ট্যুরিজম বাইকার্স যুব উন্নয়ন সংঘের কথা। স্বদেশের প্রকৃতির প্রেমে বার-বার হাবুডুবু খেতেই ছুটে চলে পাহাড়-পর্বত আর সমুদ্রে পানে। ঘুরতে বাদ যায়নি বাংলাদেশের কোনও পর্যটন এরিয়া। সবই ঘুরেছেন বাইকে করে। একঝাঁক বাইকার প্রেমী যুবকদের নিয়ে প্রতি বছরেই বিভিন্ন ট্যুরের আয়োজন করে এই বাইকার্স গ্রুপটি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০টি বাইক ট্যুরের আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন এই গ্রুপের সদস্যরা।
তাদের সঙ্গে দুটি বাইক ভ্রমণে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আমার ভ্রমণ সঙ্গী ছিল বন্ধু মাহবুবুর রহমান খান। এর মধ্যে একটি ছিল গত বছর আগস্ট মাসে রুমা, থানচি, বান্দরবান, বগা লেক ও কেওক্রাডং। আরেকটি বাইক ভ্রমণ ছিল গত ২ মার্চ, খাগড়াছড়ি, সাজেকে ভ্যালি। সবগুলো ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয় গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে।
এই দুটি ট্যুর ছিল আমার জীবনের সেরা এবং রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। যখন পাহাড়ের রাস্তায় প্রবেশ করি, তখন দেখতে থাকি পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে চলা পথে ছোট ছোট জুম ঘর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়ের সৌন্দর্য। আর নানা জাতের ফলমূল আর পাহাড়ি গাছের দৃশ্য। উঁচুনিচু পাহাড়ে মোটরবাইক নিয়ে আমরা বেশ ক’জন বাইকারদের নিয়ে এগিয়ে চলতে থাকি। যতদূর যাই ততই মুগ্ধ হতে থাকি বিশেষ করে খাগড়াছড়ি থেকে যখন সাজেকের পথ চলতে থাকি ততই বিমুগ্ধ হতে থাকি। এ যেন সৃষ্টিকর্তার অপার এক সৃষ্টি। যা দেখে যে কেউ পাহাড়ের প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।
শ্রীপুর ট্যুরিজম বাইকার্স যুব উন্নয়ন সংঘের পক্ষ থেকে আমাদের গাইড ছিল রুহুল আমিন, তার তত্ত্বাবধানে প্রতিটি বাইকের পিছনে সিরিয়ালের স্টিকার দিয়ে দেওয়া হয় যেন, একজন বাইকার অপরজনকে অনুসরণ করতে পারে। বাইকের প্রথম সাড়িতে ছিলেন রুহুল আমিন এবং সর্বশেষে ছিলেন আজিজুল ইসলাম। একজন সামনের রাস্তার দিক নির্দেশনা প্রদান করছিলেন অপরজন পিছনের সাড়ির সকল বাইকের সিরিয়াল মেইনটেইন করে পথ চলছিল।
সকলের গায়ে ছিল লাল কালো রংয়ের পোশাক। পাহাড়ি রাস্তায় যখন সাড়ি সাড়ি বাইক চলছিল। আশে পাশের মানুষ আর অন্যান্য পর্যটকদের নজর ছিল আমাদের দিকেই। আর আমার তো মনে হচ্ছিল পৃথিবীর স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করছি। বিশেষ করে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথে যে রাস্তাটুকু ছিল, সেই রাস্তাটুকু ছিল আরও বেশি রোমাঞ্চকর। আমাদের শৃঙ্খলা দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনও প্রশংসা করছেন। কখন যে পথ শেষ হয়ে গেল কেউ টেরই পায়নি। মেঘের রাজ্য সাজেকে প্রবেশের ঠিক আগে একটি উঁচু চূড়া রয়েছে এটি ছিল বেশ রোমাঞ্চকর।
আমাদের প্রধান গন্তব্য ছিল সাজেক ভ্যালি আর কংলাক পাহাড়। বিকেলের স্কট ধরে আমরা বিকেলের মধ্যেই সাজেকে পৌঁছে যাই। সন্ধ্যায় হ্যালিপ্যাড চলে যাই। আর রাতের সময়টা যার যার মতো করে উপভোগ করি।
ভোরে উঠে চলে যাই কংলাক পাহাড়ে। রিসোর্ট থেকে বাইকে করেই কংলাকের নিচ পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে পাহাড়ে উঠে ভোরের সকালটা উপভোগ করি। এক কথায় চোখ ধাঁধানো,মন জুড়ানো। পাহাড়ের সেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে বেড়িয়েছি দুদিন। অবশেষে সাজেক ভ্যালির ভ্রমণ শেষে উচ্ছ্বসিত সবাই।
লেখক: সদস্য সচিব, ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (UJF)।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available