• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১৬:২৫ (03-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১৬:২৫ (03-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

তথ্য ও প্রযুক্তি

তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন

৮ ডিসেম্বর ২০২৩ রাত ০৯:০৩:২৪

তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন

অধ্যাপক মো. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার: একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো তথ্যপ্রযুক্তি। নব্বইয়ের দশক থেকেই বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিগত একযুগে উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও প্রযুক্তি খাতে বিস্তর সাফল্য অর্জন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়নের বদৌলতে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উঠে এসেছি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। 

বাংলাদেশ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ও উন্নয়নে সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত "ডিজিটাল বাংলাদেশ" রূপকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা, নাগরিকদের জীবনকে উন্নত করা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা, সর্বোপরি দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা। 

কানেক্টিভিটি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, জাতীয় আইসিটি নীতি, হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্টের মতো বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এই প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই দিনে টেলিকমিউনিকেশন, ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, আউটসোর্সিংসহ প্রভৃতি খাতের প্রসারে উদ্যোক্তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের সামগ্রিক আয়। 

দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি 

প্রথমত, বাংলাদেশে সব থেকে বেশি উন্নতি সাধন হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও  নতুন প্রযুক্তির অভিযোজনে বর্তমান সরকার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়সহ হাওর ও দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, নতুন আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ও টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের সাথে সংযোগ স্থাপন, দেশের নিজস্ব সাটেলইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১' উৎক্ষেপণ এবং ফাইভ-জি প্রযুক্তির সেবা প্রবর্তনের ফলে দেশের প্রায় শতভাগ জনগোষ্ঠীর ও প্রান্তিক এলাকায় ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশে গত প্রায় ১৫ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে দেড়শ গুণেরও বেশি। 

২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৮ লাখ, এখন সেটি ১৩ কোটির থেকে বেশি। মোবাইল ফোনের গ্রাহকও বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল চার কোটির কম, সেখানে চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই সংখ্যা ১৮ কোটি ৮৬ লাখ পৌঁছেছে। 

সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন থাকার ফলে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ করা করা সম্ভব হচ্ছে। ২০০৯ সালে দেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ এর ব্যবহার ছিল মাত্র ৭.৫ Gbps, সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪০০ Gbps করা হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য করার জন্য ২০০৫ সালের ৭৫ হাজার টাকা দামের ব্যান্ডউইথ এর মূল্য কমিয়ে প্রতি Mbps-এ ক্ষেত্র বিশেষে সর্বনিম্ন মাত্র ৩০০ টাকা করা হয়েছে। 

পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সারাদেশে তারভিত্তিক ইন্টারনেটের একই রেট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ফোন সেবা চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে দেশের ৬টি সাইটে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক ফাইভ-জি সেবা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কারণে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সেবা। ব্যবসাসহ যেকোনো উদ্দেশ্যে বহির্বিশ্বেও দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন এখন আর কোনো সমস্যা নয়। 

ঠিক টেলিকমিউনিকেশনের হাত ধরেই আসে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠানো ছিল কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তারও আগে কোথাও টাকা পাঠাতে মানি অর্ডার করতে হতো। আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না থেকে জনগণ এখন ডিজিটাল পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। 

বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ এর মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে মানুষের জীবন সহজতর হয়েছে এবং পরনির্ভরশীলতা কমেছে। পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন এক নম্বরে। বাংলাদেশে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতি মাসে লেনদেন এক লাখ কোটি টাকার ও বেশি পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিকাশ, রকেট, নগদ এর মাধ্যমেই এখন গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ সকল প্রকার বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। 

দৈনন্দিন জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে সরকারি ডিজিটাল সেবার কথায় উঠে আসে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং জনসেবা প্রদানের উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবা চালু করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সেবা সিস্টেম। 

বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, জমির পর্চা, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অসচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদি সেবা কোনো ঝামেলাহীনভাবে প্রদান করা হয়। 

দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে এখন প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ ৬০ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সেবাসমূহ যেমন—মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিওতে কনফারেন্স, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিং পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। 

দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৬০২টি ডিজিটাল সেন্টার, ৮ হাজার ২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির আবেদন, পড়াশোনা, পাসপোর্ট আবেদন, বিমানের টিকিট, রেলওয়ে টিকিটিং, ই–টেন্ডারিং, টিন সনদ, আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। 

শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রায় ৮৬ হাজার ডিজিটাল ক্লাসরুম বা ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড ও আধুনিক ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা এক সময় ধারণারও বাইরে ছিল। 

করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে টিকা কার্যক্রম, টিকার তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে। 

শুধু বিভাগীয় বা জেলা শহরে নয়, উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। হেল্পলাইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে জরুরি সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সেবা পাচ্ছে জনগণ। 

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবা ও তথ্যকে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৩৩ শর্টকোড ব্যবহার করে কল সেন্টার–ভিত্তিক জাতীয় সেবা চালু করা হয়েছে। 

বেকারত্ব হ্রাস

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের আওতায় ১৫ বছরে আইটি ফ্রিল্যান্সিং-এ সাড়ে ৬ লাখ, সফটওয়্যার শিল্পে আইটি ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার শিল্পে ৩ লাখ, হার্ডওয়্যার শিল্পে ৫০ হাজার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতে ৭০ হাজার, ই-কমার্সে ৩ লাখ এবং রাইড শেয়ারিং, ফিনটেক, এডুটেক, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদি খাতে প্রায় ২০ লাখের বেশি তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। 

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ তরুণী এখন নিজের কর্মসংস্থান নিজেই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, অথবা বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক গ্লোবাল লোকেশন সার্ভিস ইনডেক্স অনুসারে, দেশের আইটি আউটসোর্সিং র‍্যাঙ্কিং ২১-এ দাঁড়িয়েছে এবং হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহক। 

নিজের বাগানের ফল, নিজের পুকুরের মাছসহ সবকিছু এখন অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে দেশে বিদেশে সবজায়গায় মানুষ বিক্রি করতে পারছে। বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মবিশ্বাস, বৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানির দরজায় কড়া না নেড়ে ঘরে বসে কিছু করা। 

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে সর্বমোট ১০৯টি (সরকারি-৯২টি ও বেসরকারি-১৭টি) স্থানে হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার-এ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চলমান রয়েছে। 

এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ২৩০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি পার্কে ২৮,০০০ জনের অধিক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। 

আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৩৫,৩১৫ জনকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরও ৪৫,০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। রাজধানীর বাইরে এখন নির্মিত ২৮টি হাই-টেক পার্কে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে তিন লাখের বেশি কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হবে।  

দেশের এতসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে সরকারি মালিকানায় প্রথম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে এখন প্রায় ২৫০০ টি সক্রিয় স্টার্টআপ রয়েছে যারা ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের আইটি সেক্টরে আরও ৫ হাজার স্টার্টআপে উন্নীত করা হবে, যার মাধ্যমে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। 

সফলতার অগ্রগতি

ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। ২০০৬ সালে এ খাতে রপ্তানি ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার যা ২০২৩ সালের জুলাইতে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। 

বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন রপ্তানি বেড়েছে। 

ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়ায় ফলে এই খাতে রপ্তানি আয় দ্রুত বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে সফটওয়্যার, পরামর্শ এবং সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ সহ আইটি এবং তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা (আইটিইএস)-এর রপ্তানি থেকে $৫৯২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে বাংলাদেশ, যা স্থানীয় বাজারের উপার্জনে ১.৫ বিলিয়ন ডলার এর সমান বাজারের শেয়ার ধারণ করে। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। 

দেশের তথ্য সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় ডাটা সেন্টার। বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ডাটা সেন্টার এখন বাংলাদেশে।  ক্লাউড কম্পিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তি থাকা ডাটা সেন্টারগুলোর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা এটি। যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়। 

ডাটা সেন্টারে ৫৫ হাজার ওয়েবসাইট এবং ১১ কোটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হোস্ট করা আছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য-উপাত্ত রেজিস্ট্রেশন ও এনবিআর সিস্টেম, ই-নথি, সুরক্ষাসহ সবকিছু ওখানে হোস্ট করা রয়েছে। 

দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও আস্থা অর্জন করেছে এই ডাটা সেন্টার। পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে এখন আর বিদেশের ডাটা সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হবে না। 

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আপটাইম ইন্সটিটিউট থেকে টায়ার সার্টিফিকেশন অব অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটির সনদ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ডাটা সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে নিজ দেশে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি বেড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 
 

বর্তমান সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিখাতে অন্যতম সাফল্য ছিল ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ। বাংলাদেশের জন্য এটি একটা বড় অর্জন কারণ এর হাত ধরেই বাংলাদেশ মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে। 

আজ বাংলাদেশ ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে অতি সহজে, অল্প সময়ে ও কম খরচে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে মোট ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৩টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। 

দেশের উন্নয়নে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধিশীল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এখন পর্যন্ত, আইসিটি খাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়ন—সরকারি নীতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং দক্ষ জনশক্তির সমন্বয়কে প্রতিফলিত করে। 

বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের চলমান ধারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও সাফল্যমণ্ডিত করবে। আমাদের আগামীর পথচলা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)' অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং সর্বোপরি 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' বাস্তবায়ন। 

লেখক: প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ