নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) দিবস ২২ জুন থেকে ১৫ জুলাই পরিবর্তন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান (চাঁন মিয়া)। দীর্ঘ নয় বছর পর বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে এ বছর ২২ জুন উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় নোবিপ্রবি দিবস।
২২ জুন রোববার ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আনন্দ র্যালি এবং কেক কেটে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। এতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ ২৩ জুন সোমবার দিনব্যাপী গবেষণা মেলা, একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদানসহ নানা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে গত ৯ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে নোবিপ্রবির চতুর্থ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান ২০১৫ সালে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত দিবসের তারিখ পরিবর্তন করেন এবং ২২ জুনের পরিবর্তে ১৫ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০০৬ সালের ২২ জুন বিএনপি সরকারের আমলে শুরু হওয়া একাডেমিক কার্যক্রমের দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে মেনে নিতে পারেননি আওয়ামীপন্থী উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান এবং তার অনুসারীরা। তাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েই পরবর্তী বছর থেকে আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া 'নোবিপ্রবি আইন-২০০১' এর পাশ হওয়া ১৫ জুলাইকে তারিখকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, নোবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের ২২ জুন। এ তারিখটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন দিবস হিসেবে পালন করছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ঐ বছর ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ উপাচার্যের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। পরবর্তীতে হঠাৎ করে ঘোষণা দেন ২০১৬ সালে থেকে ১৫ জুলাই, যেদিন ২০০১ সালে নোবিপ্রবি আইন সংসদে পাশ হয়, সেদিনটিই হবে নোবিপ্রবি দিবস। যদিও দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশের দিন নয়, বরং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিনকেই দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
এই ঘটনা নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ড. অহিদুজ্জামান নোবিপ্রবিতে ভিসি হিসেবে যোগ দেওয়ার বছর ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়েছে। কিন্তু, ওই দিবসে অফিসার্স এসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি তারেক রাশেদ উদ্দিন বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব বর্তমান ভিসিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক সংসদে আইন পাশের (২০০১সাল ১৫ জুলাই) দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস করা হোক।’ পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নানা সমালোচনার মুখেও ২২ জুনের পরিবর্তে ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের মতে, এটি ছিল রাজনৈতিক চাটুকারিতা এবং ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা। দিবস পরিবর্তনের পেছনে একাডেমিক কোনো ভিত্তি ছিলো না, বরং এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে প্রশাসনিক পদে থেকে তৎকালীন উপাচার্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।
নোবিপ্রবি আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে কলুষিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিষবাষ্প প্রকটভাবে গ্রাস করেছে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোকে। প্রতিহিংসা কতটা প্রখর হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকেও রাজনীতিকরণ করা যায়- তা দেখিয়ে গেছেন সাবেক ভিসি এম ওয়াহিদুজ্জামান। দলীয় পদলেহনের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনক্ষণ পরিবর্তনের যে কলঙ্ক নোবিপ্রবিতে রচিত হয়েছিল, ছাত্রজনতার বিপ্লবের সুবাতাসে তা আজ সংশোধিত হচ্ছে।
২২ জুনকে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উৎযাপনের বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পরিবর্তন করা হয়েছিল, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পরিবর্তনের কোনো নিয়ম সাধারণত দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে ২২ জুনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available