• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১৭:২৩ (10-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১৭:২৩ (10-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

বরিশাল মেডিকেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর

২৭ আগস্ট ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯:২৩

বরিশাল মেডিকেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর

বরিশাল ব্যুরো: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে দুই ছাত্রীকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় কলেজের সকল আবাসিক হলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য হল সুপার ও সহকারী হল সুপারদের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ প্রদান করে শনিবার রাতে নোটিশ প্রদান করেন। এছাড়া ছাত্রী র‌্যাগিংয়ের ইন্ধনদাতা চিকিৎসকদের হামলায় সাত সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা ও হামলার ঘটনার দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি।

এ ঘটনায় বাংলাদেশে কর্মরত সকল ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশী জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম), বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে ছাত্রী র‌্যাগিংকারীদের বাঁচাতে ইন্ধনদাতা এবং সাংবাদিক নির্যাতনকারী চিকিৎসকদের বিচার দাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং বন্ধ কারার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

অন্যদিকে র‌্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রীকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসাবে দাবি করে গণমাধ্যমে কলেজ কর্তৃপক্ষ যে বিবৃতি দিয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবার। বিষয়টিকে পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট হিসাবে জানিয়ে র‌্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী নুজহাতের মা সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়েকে প্রচণ্ড নির্যাতন করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ‘তোমরা চিকিৎসাসহ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাও, নাকি বিচার চাও? যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে তোমাদের। বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ আমরা বলেছি, আমরা দুটোই চাই। নির্যাতনকারী ছাত্রীদের পক্ষে যায়, এমন প্রস্তাব কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। এছাড়া আমার মেয়েকে এবং আমাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলা হয়েছে। কিন্তু এটা পুরোপুরি মিথ্যা। র‌্যাগিংয়ের ঘটনাকে অন্যদিকে নিতে এবং নির্যতনকারী বিডিএসের ৭ম ব্যাচের ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা এবং এমবিবিএস ৫০তম ব্যাচের ছাত্রী নীলিমা হোসেন জুঁইকে বাঁচাতে এমনটা করা হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরিশাল জেলা শাখার সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলেন, বরিশালে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের হামলা করার বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি আরও জানান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ স্বয়ং এই ঘটনায় জড়িত থাকলে খুবই দুঃখজনক এবং আমি আশা করি, বিষয়টি অতি দ্রুত বরিশাল জেলা প্রশাসক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন করবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। সত্য ঘটনা উন্মোচন করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছে গণমাধ্যম। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করা হলে সেটা কোনোভাবেই ঠিক নয়৷ যদি এ ধরনের ঘটনায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কতৃপক্ষ দায়ী হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্টরা।

যুব সংগঠন বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট (প্রতীকি যুব সংসদ) এর মহাসচিব ও নির্বাহী প্রধান মো. সোহানুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিং এবং এর সংবাদ সংগ্রহকালে ৭ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর শিক্ষকদের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনায় সুবিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি র‌্যাগিং ও সহিংসতা মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে।

উল্লেখ্য, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের দুই ছাত্রীকে র‌্যাগিংয়ের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর কলেজ হোস্টেল সুপারসহ দুই চিকিৎসক হামলা করেন। পরে তাদের সঙ্গে কলেজের ৫০তম ব্যাচের এক ছাত্র যোগ দেয়। এর আগে বৃহস্পতিবার কলেজ হোস্টেলে আবাসিক ছাত্রী নুজহাত খান র‌্যাগিংয়ের শিকার হন। তার ওপর হোস্টেলের সেক্রেটারি ও বিডিএসের ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা এবং সহকারী সেক্রেটারি ও ৫০তম ব্যাচের ছাত্রী নীলিমা হোসেন জুঁই নির্যাতন চালান। এর বিচার চাইতে শনিবার সকালে ওই ছাত্রী ও তার মা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে যান। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা, চিত্র সাংবাদিক রুহুল আমিন, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ, ফটোসাংবাদিক সুমন হাসান, এশিয়ান টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান ফিরোজ মোস্তাফা ও চিত্র সাংবাদিক আজিম শরিফ যান।

সেখানে সাংবাদিকদের কাছে ভুক্তভোগীরা বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রথমে চড়-থাপ্পড়, পরে চেয়ার দিয়ে পেটায় হোস্টেল সুপার ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সাহা এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিচয়দানকারী কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. সৈয়দ বাকী বিল্লাহ। রুম থেকে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে ওই ছাত্রী ও তার মাকে আটকে রাখে দুই চিকিৎসক। কলেজের ছাত্রদের ডাক দিয়ে তারা সাংবাদিকদের মারধরের নির্দেশ দেন। তখন ৫০তম ব্যাচের ছাত্র আজিম হোসেনও তাদের মারধর করেন।

হামলার শিকার চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা জানান, র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই ডা. বাকী ও ডা. প্রবীর হামলা চালান। ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভাঙচুর করা হয়।

সময় টিভির রিপোর্টার শাকিল মাহামুদ বলেন, ওই ছাত্রী ঘটনার বর্ণনা দেওয়া শুরু করলে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের ক্যামেরাপারসন রুহুল আমিনের ওপর হামলা করে, তাকে চেয়ার দিয়ে পেটানো হয়। ওই ছাত্রী ও তার পরিবারকে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।

এশিয়ান টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান ফিরোজ মোস্তফা বলেন, তৃতীয় বর্ষের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুজহাত খান ও একই ব্যাচের সামিয়া সুলতানাকে নির্যাতন করা হয়েছে, এমন খবর পেয়ে আমরা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যাই। ওই ছাত্রীর বক্তব্য নেওয়ার সময় র‌্যাগিংয়ের ইন্ধনদাতা ছাত্রী হোস্টেল সুপার ডা. প্রবীর আমাদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তার সহযোগী ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিচয়দানকারী ডা. বাকী বিল্লাহ। এরপর ছাত্রদের ডেকে তারা আমাদের ওপর হামলা করার নির্দেশ দেন। এছাড়া হামলা করার জন্য ইন্ধন দেন ছাত্রী নির্যাতনকারী নীলিমা হোসেন জুঁইয়ের স্বামী ডা. আতিক। সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা আরও বলেন, হোস্টেল সুপার ডা. প্রবীর সাহার বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। তার নানা অপকর্মের কথা ছাত্রীরাই জানিয়েছেন।

বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, যারা মানুষকে চিকিৎসা দেবে, যারা নতুন চিকিৎসক তৈরি করবে, তারাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে নিজেদের দোষ ঢাকতে। সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা ন্যাক্কারজনক। এর আগেও বরিশাল মেডিকেলে একাধিক র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশের মধ্যস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক নেতারা আলোচনায় বসেন। এরপর হামলার শিকার সাংবাদিকদের কাছে হামলাকারী দুই চিকিৎসক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই ছাত্রীর পরিবার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই ছাত্রী মানসিক বিকারগ্রস্ত।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, দুই পক্ষকে বসিয়ে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে র‌্যাগিং এর সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে  সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বরিশাল প্রকাশক-সম্পাদক পরিষদের সভাপতি কাজী আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজসহ নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও  সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক বিজন সিকদার ও সদস্য সচিব সুজন আহমেদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ববিসাস), বরিশাল সম্মিলিত সাংবাদিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ, বরিশাল সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, বরিশাল ডিবেটিং সোসাইটি (বিডিএস)সহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাংবাদিকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ