নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীতে হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে এক মুসলিম মহিলার সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী মমতাজ আক্তার নামে এক নারী সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত যুবকের নাম হৃদয় চন্দ্র শীল ওরফে মো. হৃদয়। তিনি চাটখিলের দশঘরিয়া এলাকার পারকোট শীল বাড়ির কেশব চন্দ্র শীলের ছেলে। প্রতারণার বিষয়ে কথা বলতে গেলে মো. হৃদয় ওই নারীকে অশ্লীল ভাষায় হুমকি-ধামকি ও মারধর করে। গত ২৩ মে শুক্রবার মো. হৃদয় এর কর্মস্থল সোনাইমুড়ী আধুনিক শিশু হাসপাতালে গিয়ে কথা বলতে গেলে এই ঘটনা ঘটে।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, হৃদয় চন্দ্র শীল ও মমতাজ আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলে। পরে স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে এফিডেভিটের মাধ্যমে হৃদয় চন্দ্র শীল থেকে নাম পরিবর্তন করেন মো. হৃদয়। নাম পরিবর্তন করে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বরে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ১০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্যে বিবাহ করেন হৃদয় ও মমতাজ। চার বছর সংসার চলাকালে মো. হৃদয় প্রায় ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। গত একমাস থেকে মো. হৃদয় তার পূর্বের ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রী মমতাজ আক্তার প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করেন হৃদয়। এখন সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে মমতাজ আক্তারকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও অস্বীকার করছেন তিনি। গত শুক্রবার এই বিষয় নিয়ে হৃদয় এর কর্মস্থলে গিয়ে কথা বলতে চাইলে মমতাজ আক্তার হুমকি ও হামলার শিকার হন।
এ বিষয়ে মমতাজ আক্তার জানান, হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হৃদয়। ইসলামের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তিনি হৃদয়কে বিয়ে করেন। বিয়ের গত চার বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিমাণের টাকা তিনি স্বামী হৃদয়কে দিয়েছেন, যার সর্বমোট প্রায় ৭ লাখ টাকা হবে। গত একমাস থেকে হৃদয়ের আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে। সে তার পূর্বের ধর্মে ফিরে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে এখন মমতাজ আক্তারকে স্ত্রী হিসেবেই অস্বীকার করছেন হৃদয়। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে বিয়ের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে মিটমাটের প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে তাকে। ধর্মের নামে এমন প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন মমতাজ আক্তার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মমতাজ ও হৃদয়রা বিয়ের পরে চৌমুহনী এলাকার গণিপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তাদের সেই বাড়িতে গিয়ে হৃদয়ের ব্যবহৃত জামা, লুঙ্গি এমনকি সিগারেটের ছাই ফেলা ‘স্ট্রে’ এর দেখা মেলে সেখানে। এর আগে মমতাজের আরেকটি বিয়ে ছিল। তবে সেই সংসারে বিচ্ছেদ হয়। পূর্বের সংসারের দুটি মেয়ে রয়েছে তার।
বেশ কয়েক বছর থেকে তারা এই বাড়িতে বসবাস করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাড়ির মালিক হানিফ চৌধুরী। তিনি জানান, গত ৪ বছর থেকে এই বাসাতেই ভাড়া থাকছেন মমতাজ ও হৃদয় দম্পতি। স্বামী হৃদয় সপ্তাহে ৩-৪ দিন বাড়িতে আসতেন। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় তাদের বিবাহের বৈধতা অনুযায়ী কোর্ট ম্যারেজের কাগজও যাচাই করেছিলেন। আর হৃদয় ছেলেটা হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছেন এই বিষয়টিও তিনি জানতেন বলে নিশ্চিত করেন হানিফ চৌধুরী।
প্রতিবেশী মিলন মিয়া জানান, বেশ কয়েক বছর যাবত তার পাশের রুমেই ভাড়া থাকছেন মমতাজ ও হৃদয়। হৃদয় ছেলেটি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করেছে বলেও শুনেছেন তিনি। দীর্ঘদিন তারা এই বাসাতেই সংসার করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কর্মস্থলে গিয়ে কথা হয় হৃদয় চন্দ্র শীল ওরফে মো. হৃদয়ের সাথে। তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেননি। কোনো মহিলাকে বিয়েও করেননি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available