বকশীগঞ্জ (জামালপুর)প্রতিনিধি: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের পর জামালপুরের বকশীগঞ্জে দশানী নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিন কিলোমিটারজুড়ে ভাঙনে বসত ভিটাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বর্ষণে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের পাঁচটি ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের শব্দে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এসব গ্রামের মানুষের। এক সপ্তাহের টানা ভাঙনে অনেক পরিবারই এখন নিঃস্ব। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের। প্রকৃতির নির্মমতায় চোখের জলে ভাসছে ভাঙন কবলিতরা।
নদী ভাঙনে মেরুরচর ইউনিয়নের ঘুঘরা কান্দি, আইরমারী মন্দী পাড়া, উজান কলকিহারা, কলকিহারা ও খাপড়া পাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। অপরদিকে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী, বাঙালপাড়া ও বালু গ্রামের ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে।
ইতোমধ্যে মেরুরচর ইউনিয়নের ঘুঘরা কান্দি বাজার, একটি মসজিদ ও একটি গ্রামীণ রাস্তা নদীতে ভেঙে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে মন্দী পাড়ায় অবস্থিত এলজিইডির একটি ব্রিজ, মন্দী পাড়া বাজার ও শত শত বিঘা ফসলি জমি এবং বাড়িঘর। প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদী ভাঙা মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসত ভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোর। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ দুর্দশায় পড়লেও এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
স্থানীয়দের দাবি মেরুরচর ইউনিয়নের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করায় নদী দশানী ও শাখা নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দেয়। এ কারণেই আরও বেশি ভাঙছে আগ্রাসী দশানী নদী। এবারের ভাঙনে শুধু এক পাড়ে নয় দু পাড়েই ভাঙন শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রায় ২০ মানুষ। ভাঙনে ভিটা মাটি হারিয়ে বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।
স্থানীয়দের দাবি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে অস্তিত্ব হারাতে পারে ভাঙনের শিকার আটটি গ্রাম। তাই অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণ ও ডাম্পিং ফেলে এই গ্রামগুলোকে ভাঙন থেকে রক্ষার দাবি জানান এলাকাবাসী।
ভাঙন কবলিত ঘুঘরা কান্দি গ্রামের কৃষক শের আলী, মোতালেব হোসেন, মকবুল হোসেন বলেন, দশানী নদীর ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। বার বার ভাঙনের ফলে মানচিত্র বদলে যাচ্ছে এই এলাকার। আমরা ভিটা মাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছি। তাই ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
মেরুরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান, ঘর বাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শিগগিরই ডাম্পিং করা না হলে এই পাঁচ গ্রামের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই আমরা জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সুমন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করতে ত্রাণের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, মেরুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তা আমরা অবগত হয়েছি। যে সব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে এবং ভাঙন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available