• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৩রা আষাঢ় ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:২৬:৩৮ (17-Jun-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৩রা আষাঢ় ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:২৬:৩৮ (17-Jun-2025)
  • - ৩৩° সে:

ব্যাংক ও বীমা

ফ্যাসিস্টের দোসর কিবরিয়া-হোসনে আরা এখনও বহাল তবিয়তে

১৭ জুন ২০২৫ দুপুর ১২:৩১:১২

ফ্যাসিস্টের দোসর কিবরিয়া-হোসনে আরা এখনও বহাল তবিয়তে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ওই দলের অনুসারীদের দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান পদে বহাল তবিয়তে আছেন সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইতালি আওয়ামী লীগের সম্মেলন আহ্বায়ক কিবরিয়া গোলাম মোহামাদ ওরফে জিএম কিবরিয়া। এমনকি তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, যিনি ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক, কোম্পানির ‘ওভারসিজ এজেন্সি ডিরেক্টর’ পদে থেকে নামে-বেনামে কমিশনের নামে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন।

তার সহযোগী কোম্পানির বিতর্কিত সিইও মো. শাহ জামাল হাওলাদার আওয়ামী লীগের অন্যতম অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) তার পুনঃনিয়োগ বাতিল করে। আইডিআরএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক অবস্থা চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও দেউলিয়ার পর্যায়ে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২১ সালে জিএম কিবরিয়া ও তার স্ত্রী হোসনে আরাকে উপঢৌকন হিসেবে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির লাইসেন্স দেয় শেখ হাসিনা সরকার। এরপর থেকেই কোম্পানিটি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে, যার ফলে মাত্র তিন বছরের মাথায় তা খাদের কিনারায় পৌঁছায়। আইডিআরএ’র তদন্তেও অনুমোদনহীন বীমা বিক্রি, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পলিসি তামাদির উচ্চহার, ক্যাশ ইন হ্যান্ড’র নামে অর্থ আত্মসাৎ, একক প্রিমিয়ামকে মেয়াদি বীমা দেখিয়ে ব্যাপক তহবিল লোপাট, সম্পদ বিনিয়োগে অনিয়মসহ নানা দুর্নীতি আর কেলেঙ্কারির বোঝা নিয়ে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে বহাল তবিয়তেই আছেন শাহ্ জামাল হাওলাদার। প্রমাণ পাওয়ার পর তার পুনঃনিয়োগের প্রস্তাব ২০২৪ সালের ১০ জুন নাকচ করে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠান আইডিআরএ’র পরিচালক আহম্মদ এহসান উল হান্নান।

আইডিআরএ’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিইও শাহ জামাল হাওলাদার কোম্পানির আর্থিক অবস্থা চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও দেউলিয়া পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি অনিয়ম, অপচয় এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে গ্রাহক ও কোম্পানির স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করেছেন। তার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় বীমা আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে আইডিআরএ তার পুনঃনিয়োগের প্রস্তাব নাকচ করে। তবে শাহ জামাল এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করলে আদালত ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই ছয় মাসের স্থগিতাদেশ ও স্থিতাবস্থা দেন। পরে আইডিআরএ তা স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও সেটি খারিজ হয়। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। আইডিআরএ’র মুখপাত্র জানান, বিষয়টি নিষ্পত্তিতে সব আইনি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং দ্রুতই শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২৪ সালের ১০ জুন এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে আইডিআরএ জানায়, কোম্পানির সিইও পদে শাহ জামাল হাওলাদারের পুনঃনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য নয়। কারণ, তার পূর্ববর্তী মেয়াদে নানা অনিয়ম, আইনের ব্যত্যয় ও আর্থিক দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে, যা ১ দশমিক ৪৮ গুণ বেশি খরচ, অনুমোদনহীন বীমা পরিকল্প বাজারজাত, প্রিমিয়াম অর্থে তহবিল লোপাট এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে কোম্পানিকে দেউলিয়া করে তোলার দায় সিইও’র।

২০২১-২০২৩ সালের নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, অনুমোদনহীন ‘সুরক্ষিত দ্বিগুণ প্রদান এক কিস্তি বীমা’ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেই কোম্পানির অধিকাংশ আয় এসেছে। এই পরিকল্পনায় এক কিস্তিতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ খরচের সীমা থাকলেও সেটি ৪৫ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত দেখিয়ে ২৩ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া লাইফ ফান্ডে মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ টাকা থাকায় গ্রাহকের দাবি পরিশোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শুরু থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকা হলেও এর বেশিরভাগই ব্যয় করা হয়েছে, বিনিয়োগ তেমন নেই। প্রতিষ্ঠানটির ১৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থেকে দুই দফায় মোট ৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যা এখনও পুনঃভর্তি হয়নি। এসব অনিয়মে পরিচালকদেরও জবাবদিহির মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত তিন বছরে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ৮১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে, যার মধ্যে অনুমোদনহীন ‘সুরক্ষিত দ্বিগুণ প্রদান এক কিস্তি বীমা’ পরিকল্প থেকে এককালীন প্রিমিয়াম সংগ্রহ প্রায় ২৪ কোটি টাকা। তবে এত আয়ের পরও প্রতিষ্ঠানটি লাইফ ফান্ড সন্তোষজনকভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং একক কিস্তি বীমায় ডাটা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রিমিয়ামের অর্থ অপব্যবহার করে কোম্পানিকে চরম তারল্য সংকটে ফেলেছে। বহিঃনিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোম্পানি ২০২২ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ২০২১ ও ২০২২ সালে মোট ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার ‘ক্যাশ ইন হ্যান্ড’ বাস্তবে অনুপস্থিত। এত বড় আর্থিক অনিয়ম সত্ত্বেও ক্যামেলকো বা বিএফআইইউতে এসটিআর বা এসএআর না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ