আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ব্যাপক শুল্কের আদেশ বাতিল করে দিয়েছে দেশটির একটি ফেডারেল আদালত, যা তার অর্থনৈতিক নীতির একটি প্রধান অংশের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ম্যানহাটনভিত্তিক কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড রায়ে জানিয়েছে, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট’ (আইইইপিএ) নামে একটি জরুরি আইন ট্রাম্প প্রশাসন যে ব্যাখ্যায় ব্যবহার করেছে, সেটি প্রেসিডেন্টকে এককভাবে প্রায় সব দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না।
আদালত বলেছে, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে বিদেশি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এবং প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষমতা সেটি অতিক্রম করতে পারে না।
রায় ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন আপিলের ঘোষণা দেয়।
আদালত একইসঙ্গে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত পৃথক একটি শুল্ক ব্যবস্থাকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে, যা ট্রাম্প প্রশাসন মাদক এবং অবৈধ অভিবাসনের প্রবাহ ঠেকানোর যুক্তিতে প্রয়োগ করেছিল।
হোয়াইট হাউজের উপপ্রেস সচিব কুশ দেশাই বলেন, “একটি জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কীভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে, তা নির্ধারণ করার অধিকার অনির্বাচিত বিচারকদের নয়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এই সংকট মোকাবিলায় এবং আমেরিকার মহত্ত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রশাসন নির্বাহী ক্ষমতার প্রতিটি হাতিয়ার ব্যবহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই মামলাটি ট্রাম্পের তথাকথিত “লিবারেশন ডে” শুল্কের বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জ, যা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ‘লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার’ যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি ছোট ব্যবসার পক্ষ থেকে দায়ের করে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে।
এই মামলার সঙ্গে যুক্ত ১২টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আইন স্পষ্ট—কোনো প্রেসিডেন্টের এককভাবে কর বাড়ানোর ক্ষমতা নেই। এই শুল্ক কার্যকর থাকলে তা আমেরিকার সাধারণ পরিবার ও ব্যবসাগুলোর ওপর বড় করের বোঝা হয়ে দাঁড়াতো, যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক ক্ষতি দেখা যেত।”
এই মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে দায়ের করা সাতটি মামলার একটি, যার মধ্যে ১৩টি রাজ্য ও অন্যান্য ছোট ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
তিন বিচারকের একটি প্যানেল তাদের রায়ে বলেন, ১৯৭৭ সালের আইন আইইইপিএ প্রেসিডেন্টকে আমদানি শুল্ক আরোপের জন্য যে ক্ষমতা দেয়, ট্রাম্প তার অনেক বাইরে গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
রায়ে বলা হয়েছে, “বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিশোধমূলক শুল্ক আদেশগুলো আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের যে ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে আইইইপিএ-তে দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো বাস্তব হুমকির সুনির্দিষ্ট সমাধান নয়।”
ট্রাম্প ২ এপ্রিল এই ব্যাপক শুল্ক ঘোষণা করার পর থেকে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা যায়। কিছু পদক্ষেপ পরবর্তীতে শিথিল বা প্রত্যাহার করা হয়, যখন হোয়াইট হাউজ বিদেশি সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক প্রায় ১.৫ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সামান্য বেড়েছে।
মার্কিন আদালতের রায়ের পর ইউএস স্টক ফিউচারেও বড় লাফ দেখা গেছে। ফিউচারস হলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সম্পদ কেনাবেচার চুক্তি, যা বাজার খোলার পরের দিক নির্দেশনা দেয়।
এছাড়া মার্কিন ডলার ইয়েন ও সুইস ফ্রাঁংকের মতো নিরাপদ মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available