• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ সকাল ১০:৩৮:০৫ (20-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ সকাল ১০:৩৮:০৫ (20-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

ব্যবসা-বাণিজ্য

‘ইইউ বিনিয়োগ আকর্ষণে টেকসই বিনিয়োগবান্ধব নীতিকাঠামো জরুরী’

৪ অক্টোবর ২০২৩ বিকাল ০৫:৪৬:৩১

‘ইইউ বিনিয়োগ আকর্ষণে টেকসই বিনিয়োগবান্ধব নীতিকাঠামো জরুরী’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘বাংলাদেশের শিল্পখাতের প্রস্তুতি, দীর্ঘময়োদী টেকসই বিনিয়োগবান্ধব নীতি সহায়তা, সহায়ক কর কাঠামো, বর্হিবিশ্ব ইতিবাচক ভাবমূর্তির উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে দক্ষ মানবম্পদ, রফতানির সক্ষমতা ও পণ্যের বহুমুখীকরণ প্রভৃতি বিষয়সমূহ ইইউ বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।’ ৪ অক্টোবর বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পরিচালিত ইউরোপীয়ান কোম্পানীগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যেখানে ২০২৩ অর্থবছরে আমাদের মোট রফতানির প্রায় ৪৮ শতাংশের গন্তব্য হলো ইইউভুক্ত দেশসমূহ, যার পরিমাণ ২৫.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি জানান, ইইউ-এর বেশকিছু কোম্পানি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পখাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আনায়ন, সাপ্লাইচেইন শক্তিশালীকরণসহ সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর ইইউ’র বাজারে পণ্য রফতানিতে আমরা বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবো, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও স্থানীয় শিল্পায়নকে ব্যাহত করবে, এমন বাস্তবতায় আমাদের পণ্যে রফতানির শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত অব্যহাত রাখা জরুরী। একই সাথে বাংলাদেশ হতে তৈরি পোষাকের পাশাপাশি পাদুকা, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, মেশিনারিজ, কেমিক্যাল প্রভৃতি আরও বেশি হরে আমাদানির জন্য ইইউ-এর উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ব্যারিস্টার সাত্তার।

তিনি আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের জন্য শুধুমাত্র রফতানির গন্তব্যই নয়, একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়িক উন্নয়ন সহযোগী। ডিসিসিআই সভাপতি আশা করেন, বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর বিদ্যমান রফতানি সুবিধা রাখতে চলমান জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।    

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি বলেন, বহুবছর ধরেই ইইউভুক্ত দেশসমূহ বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য রফতানির একটি আদর্শ গন্তব্যস্থল এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে ইইউ’র সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন, ইইউ রাষ্ট্রদূত। তথ্য-প্রযুক্তি, এভিয়েশন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি, ঔষধ প্রভৃতি খাতে ইইউ কোম্পানিসমূহের বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে, তিনি মত প্রকশ করেন। এছাড়াও বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি হারে বাণিজ্য ও বিনিযোগ কার্যক্রম সম্প্রসারণের উপর রাষ্ট্রদূত জোরারোপ করেন।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং রানা প্লাজার ঘটানার পর আমাদের তৈরি পোষাকখাতে নতুন সম্ভাবনার তৈরি করেছে, যেখানে ইইউ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেটাকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সকলের সহযোগিতায় মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো এদেশে পরিচালিত ইইউ কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি হারে অ্যাডভোকেসি করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সকল ধরনের সেবা নিশ্চিতকরতে বিডা বদ্ধপরিকর এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিডার ‘ওএসএস’ প্ল্যাটফর্ম হতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সকল ধরনের সেবা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানান, আমাদের স্থানীয় বাজারের পরিমাণও বেশ বড়, যেখানে ইইউ কোম্পানিসমূহ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো স্থানীয় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে বিডা সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।  

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ইইউ’র বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ: কোম্পানীজ প্রেক্ষিত’ এবং ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক দুটি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।  

ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের কনুস্যল জোরেট মারভেলিন-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে ইইউ’র বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ: কোম্পানিজ প্রেক্ষিত’ বিষয়ক সেশনে এয়ারবাসের আবাসিক প্রতিনিধি মুরাদ বুরোফালা, লাফাজ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও ইকবাল চৌধুরী, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের সিইও মাসিহ নিয়াজি এবং জালো নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরিয়া লোপেজ অংশগ্রহণ করেন।

এয়ারবাসের আবাসিক প্রতিনিধি বাংলাদেশের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোরারোপ করেন।

ইকবাল চৌধুরী বলেন, ইইউ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষনে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই নীতি সহায়তা এবং জ্বালানী নিরাপত্তা একান্ত জরুরী। মাসিহ নিয়াজি  বাংলাদেশের অবকাঠামো, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রস্তাব করেন।

নুরিয়া লোপেজ বলেন, বাংলাদেশের বিনিযোগ সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সাথে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়ানোর উপর জোরারোপ জরুরী। তিনি আরও জানান, শিঘ্রই ইইউ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স-এর কার্যক্রম শুরু করা হবে।  

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক সেশনে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি মিরান আলী, বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এবং এইচঅ্যান্ডএম’র রিজিওন্যাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান অংশগ্রহণ করেন।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোরারোপ করেন জিয়াউর রহমান। মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর বলেন, ইউরোপের বাজারে ই-বাইকের ব্যবহারের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যেটা আমাদের বাইসাইকেল শিল্পের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

মিরান আলী বলেন, তৈরি পোষাক খাতে সারা পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে বেশি লিডসার্টিফাইড কোম্পানি রয়েছে, যেটি ইইউ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে সহায়তা করবে।

রাসেল টি আহমেদ বলেন, বর্তমানে ৮৪টি বাংলাদেশী কোম্পানি তথ্য-প্রযুক্তি সেবা জাপানের বাজারে রফতানি করছে এবং বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ইমেজ বাড়ানোর উপর জোরারোপ করতে হবে, সেই সাথে এখাতে জয়েন্ট ভেঞ্চার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশ হতে চামড়া শিল্পের বৈশ্বিক কোম্পানিসমূহ পণ্য আমদানি করছে। ইউরোপীয়ন কোম্পানিকে বাংলাদেশের সাপ্লাইচেইন খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের গ্রিণ ফ্যাক্টরিমূহের উপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির উপর তিনি জোরারোপ করেন। সেই সাথে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশে ভোকেশন্যাল ট্রেনিং কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।  

এ সময় ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মোঃ জুনায়েদ ইবনে আলী সহ চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।   

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ