নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মধ্য রাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অঙ্ক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছাত্রীর ছবি চাওয়া, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিও লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ উঠেছে মানব সম্পদ ও ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহের বিরুদ্ধে।
জুনিয়র সহকর্মীর এমন অনৈতিক কাজে বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাবি, সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভাগীয় প্রধানের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে সংকট উত্তরণের জন্য তাকে বেঁধে দেয়া হয় একাধিক শর্ত। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিভাগের অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ফাহামিদা সুলনার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া।
বিভাগীয় প্রধানের এমন সব অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে পরতে পরতে নেমে আসে বিপদ। অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে গুনতে হয় জরিমানা, নম্বর কমে যায় পরীক্ষার খাতায়, আটকে যায় থিসিস পেপারসহ এমন আরও অনেক রকমের ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাকে। সময়ের সাথে ঘনীভূত হতে থাকে সংকট। সর্বশেষ উপায় না পেয়ে মুখ খোলেন ওই বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজনা আহসান ছোয়া।
সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দীর্ঘ পাঁচ বছরের বিভিন্ন সময়ের ভোগান্তির ঘটনা প্রবাহ। যেখানে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবনের প্রত্যেক ধাপেই তিনি হয়েছেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার চিত্র।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবে নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করে। সোস্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পরতে থাকে অন্তত পনের শতাধিক ছাত্রীর সাথে করা অনৈতিক কনভারসেশন। এক পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে ছয় দফা দাবি জানিয়ে আটচল্লিশ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন তারা। ছয় দফা দাবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পেশ করেন। যেখানে তারা অভিযুক্ত শিক্ষকদের চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেন।
দাবিগুলো হলো- ১. অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকরিচ্যুত, ২. অপরাধের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনা, ৩. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ৪. অনতিবিলম্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ৫. ভবিষ্যতে এঘটনার কোন বিরুপ প্রভাব না পরার নিশ্চয়তা এবং ৬.আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে দাবির বাস্তবায়ন।
এবিষয় অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন সাহার সাথে যোগাযোগ জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি এবং একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায় তার মুঠোফোন।
এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান শুভ্রকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘তাদের যে অভিযোগ, তারা এটি বিভাগ বরাবর জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। তবে সেটা তারা করেননি। তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চাই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে, এবিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ থাকলে প্রকাশ করা হোক। অভিযোগ করলে হবে না, এর সত্যতা প্রমান করতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে ছেলে–মেয়েরা এসেছে, আমি আগামীকাল ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available