নওগাঁ প্রতিনিধি: পূর্বের দিনগুলোতে কোরবানির ঈদে নওগাঁর পশুর হাটগুলোতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ ছিল নিয়মিত ঘটনা। সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত টোলের হার অনেক কম হওয়ার কারণে সারা বছরের লোকসানের অজুহাতে হাটের ইজারাদাররা কোরবাননির ঈদে গবাদিপশুর অতিরিক্ত টোল আদায় করতো। এতে করে বছরের পর বছর ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই প্রতারিত হতো।
এমন প্রতারণার হাত থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের রক্ষা করতে চলতি বছরে জেলা প্রশাসন হাটের প্রতিটি পণ্যের খাজনার পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া হাটের শৃঙ্খলা ফেরাতেও জেলা প্রশাসনের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপে এবার জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল পশুর হাটে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া হারেই গবাদিপশুর খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় তালিকাভুক্ত ছোট-বড় মোট ৬৭টি হাট-বাজার রয়েছে। পূর্বে এই হাটগুলোতে গরু-মহিষের নির্ধারিত টোল ছিলো ৫শত টাকা আর ছাগল-ভেড়ার টোল ২শত টাকা। ফলে বছর শেষে ইজাদারদের লভাংশ খুবই কম হতো। যার ফলে ইজারাদাররা কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে রাখতো। কোরবানির হাটে ইজারাদাররা রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে পেশী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গবাদিপশুর টোল দ্বিগুণের চেয়ে বেশি আদায় করতেন।
এবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সকল ইজাদার ও হাট সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে শর্ত সাপেক্ষে হাটে আসা সকল পণ্যের টোলের হার বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গরু-মহিষ জাতীয় পশুর খাজনা বৃদ্ধি করে ৭শত টাকা ও ছাগল-ভেড়া জাতীয় পশুর খাজনা ৩শ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া খাজনা আদায়ের রশিদে আদায়কৃত খাজনার পরিমাণ লিখা বাধ্যতামূলক করা হয়।
জেলার আহসানগঞ্জ হাটে গরু কিনতে আসা আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী এলাকার ক্রেতা রহিম শেখ জানান, তিনি দুটি গরু কিনেছেন। তার কাছ থেকে প্রতিটি গরুর খাজনা হিসেবে ৭শ টাকা নেয়া হয়েছে।
জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম পশুর হাট রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাটে পশু বিক্রি করতে আসা আসলাম শেখ জানান, তিনি হাটে একটি ষাড় বিক্রি করেছেন। ক্রেতার কাছ থেকে ষাড়ের খাজনা হিসেবে ৭শ টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিগত সময়ে খাজনা আদায়ের নামে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই গলা কাটা হতো।
রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী হাটের ইজাদার মো. বেদারুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের বেঁধে দেয়া নিয়মেই খাজনা আদায় করা হচ্ছে। যেহেতু প্রশাসন সকলের কথা ভেবে খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে তাই বিন্দুমাত্র অতিরিক্ত খাজনা আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিনের অনিয়ম থেকে বেরিয়ে এসে এবার খাজনার রশিদে আদায়কৃত খাজনার পরিমাণ লিখে দেয়া হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, জেলার হাটগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরাতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গৃহীত এমন সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প ছিলো না। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত নতুন হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে কিনা তা আমরা উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করছি। নিয়মের বাইরে খাজনা আদায় করা হলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি দেন এই কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, কোরবানিরি ঈদে প্রশাসনের গলার কাটা ছিলো হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়টি। এমন সমস্যা থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইয়ের পর খাজনার পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত জেলার কোনো পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি হাটেই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিবির পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available