এশিয়ান রেডিও
শাফি উদ্দিন আহমদ: গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে দুই ডজনের বেশি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নিউক্লিয়াস পার্টি, জনপ্রিয় পার্টি, জাগ্রত পার্টি, আমজনতার দল, আ-আম জনতা পার্টিসহ গত আট মাসে এমন অন্তত ২৬টি নাম যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রতিমাসে গড়ে তিনটিরও বেশি দল গঠন করা, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একরকম আশ্চর্যজনক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনীতিতে আসা নতুন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছে এনসিপি। দলটি এখনও নিবন্ধন পায়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নামক যে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে দলটি তৈরি হয়েছে, সেগুলোও বর্তমানে সচল আছে।
রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে নতুন ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ' তৈরি হয়েছে। এছাড়াও এনসিপি'র গঠন থেকে বেরিয়ে আসা ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের নতুন সংগঠন 'ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ' এরও এই মাসের মধ্যেই আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে।
নতুন দলের ঘোষণা দিয়েছেন চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'জনতার পার্টি বাংলাদেশ' নামের দলটি আত্মপ্রকাশ করেছে। এই দলের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এবং মহাসচিব হয়েছেন সাংবাদিক শওকত মাহমুদ।
১৭ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি, যার প্রধান ডেসটিনির মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।
অর্থ পাচার ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের মামলায় ১২ বছর কারাভোগের পর গত ১৫ই জানুয়ারি জেল থেকে বের হওয়ার তিন মাসের মাথায় নতুন এই দল নিয়ে হাজির হন তিনি।
ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত রফিকুল আমীনের হঠাৎ রাজনীতিতে নাম লেখানোর কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, এই রাজনৈতিক মঞ্চকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তিনি তার জুলুমের কথা তখন যে প্রশাসক থাকবে, যে রাষ্ট্রশাসন করবে তার কাছে পৌঁছাবেন।
আত্মপ্রকাশ করা দলগুলোর মধ্যে আছে, নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, দেশ জনতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জনতার বাংলাদেশ পার্টি, জনতার দল, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দল গঠনের এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এমন নতুন নতুন দল গঠন করতে দেখা গেছে। আর নির্বাচনকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। বলছেন, নির্বাচনের সময় এগোলে "ব্যাঙের ছাতার মতো এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে"।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে আপাতদৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে যুক্ত করা হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক ক্ষেত্রেই তা স্বার্থ ও ক্ষমতাচর্চার একটি রূপ। একইসঙ্গে ভোটের সময় জোট-রাজনীতিও এই প্রবণতা বৃদ্ধিও ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে।
তবে এত কম সময়ে এতগুলো দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে। প্রায় নিয়মিতই নতুন নতুন এসব দল আর প্ল্যাটফর্ম গঠনের খবর শোনা গেলেও, এগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কতটা জানে? এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে নেটিজেনদের মধ্যে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখন একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে সবার মধ্যে যে রাজনীতি করলে খুব দ্রæত লাভবান হওয়া যায়। রাজনীতি করলে খুব দ্রুত টাকা পয়সা কামানো যায়, আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো যায়- এটা ভেতরের উদ্দেশ্য আর কি’। এর বাইরে এসব দলের রাজনীতিতে কতটুকু আদর্শ থাকে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘মূল যেটা সেটা হচ্ছে এটার পেছনে একটা রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় জড়িত আছে’।
তবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলছে, অনেক দল এলেও তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই দিনশেষে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।
House-60, Block-A, Road-1, Gulshan 1, Niketon, Dhaka, Bangladesh.
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available