বরিশাল প্রতিনিধি: শীত মৌসুমে বরিশালের নদ-নদীতে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ আহরণ কমেছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৭০০ টন ইলিশ কম ধরা পড়েছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহনীয় মাত্রার চেয়ে তাপমাত্রা কম হওয়ায় নদ-নদীতে ইলিশ কম এসেছে।
আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক বশির আহমেদ বলেন, ২৩ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গোটা মাসে এবার তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রির নিচেই ছিল।
বরিশাল মহানগরের পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গতকাল শনিবার সরেজমিনে ইলিশের সরবরাহ কম দেখা গেছে। তবে জাটকার ছড়াছড়ি ছিল। গতকাল ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ১০০, ৬০০-৯০০ গ্রামের ১ হাজার ৮৫০ এবং এক কেজির ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ওই মোকামের লিয়া এন্টারপ্রাইজের আড়তদার নাসির উদ্দিন বলেন, ইলিশ নাই বললেই চলে। গত মাসে আরও কম ছিল। ১৫ দিন ধরে ৪০-৫০ মণের বেশি ইলিশ মোকামে ওঠে না। সাধারণত তিনটিতে এক কেজি এমন ইলিশ বেশি।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, তাপমাত্রা কমায় জানুয়ারিতে মাছ ধরা পড়েছে কম। ইলিশ, পোয়া কম আহরিত হয়েছে। তাপমাত্রা যেখানে কম থাকে, সেখান থেকে মাছ সরে অন্যত্র চলে যায়।
মৎস্য কর্মকর্তা জানান, গত জানুয়ারিতে ইলিশ ধরা পড়েছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ টন। তবে গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৩ হাজার ৬০০ টন। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৭০০ টন কম ইলিশ ধরা পড়েছে।
জেলেরাও বলছেন, শীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। মেঘনা ঘেরা হিজলার উলানিয়া গ্রামের জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, শীত পড়েছে তীব্র। নদীতে জাল ফেললে ইলিশ মেলেনি তেমন একটা। ঠান্ডায় মাছ হারিয়ে গেছে।
চন্দ্রমোহনের কালাবদর নদীর টুমচরের জেলে নেতা আব্দুস সালাম জানান, নদীতে কেবল জাটকা; ইলিশ মিলছে না। ঠান্ডায় জেলেরা খালি নৌকা নিয়ে ফিরছেন। অথচ গত বছর শীতের মধ্যেও প্রচুর বড় ইলিশ পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা হ্রাসের কারণে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও বরিশালে নদীভিত্তিক ইলিশ আহরণ হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালে দেশে মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪ লাখ মিলিমিটার; কিন্তু ২০২২-২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ মিলিমিটারে। এ ছাড়া মাছের জন্য সহনীয় তাপমাত্রা আছে। ইলিশের ক্ষেত্রে তা ২৫ ডিগ্রি থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় ইলিশের প্রজনন এবং বৃদ্ধি ভালো হয়। অন্যদিকে কার্পজাতীয় রুই, কাতল মাছের ক্ষেত্রে ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হচ্ছে উত্তম।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. আশরাফুল বলেন, ইলিশ, রুই, কাতলের পেটের দিক দিয়ে লম্বা লাইন থাকে। সেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেন্সর থাকে। ওই সেন্সর তাপমাত্রা অনুভব করতে পারে। পানির যেখানে অক্সিজেন ও তাপমাত্রা কম, সেখান থেকে মাছ অনুকূল তাপমাত্রাসমৃদ্ধ স্থানে চলে যায়। বরিশাল অঞ্চলেও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ওই এলাকা থেকে হয়তো সরে গেছে ইলিশসহ অন্য সব মাছ। নদ-নদীতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণও কমেছে। ২০০৬-০৭ সালের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে নদ-নদীতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ কমেছে ৬ ভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব ঘটছে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নদীতে জাটকা বেশি। এটি রক্ষা করতে পারলেই ইলিশ বাড়বে। বিগত কয়েক বছরে জানুয়ারিতে নতুন একটি সিজন শুরু হয়েছিল ইলিশের। কিন্তু এবার কেন কম তা খতিয়ে দেখতে হবে। অত্যধিক শীতের কারণেও ইলিশ কমতে পারে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available