কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: রাজধানী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের পকেট গেট বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনরা। দ্রুত গেট খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী রোগী এবং বুড়িগঙ্গায় খেয়া পারাপারের মাঝিরা।
৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার মিটফোর্ড হাসপাতালের নৌকা ঘাটে দুপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় নিয়ে নৌকা মাঝি ও রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নানান স্লোগান দেন।
তাদের দাবি, দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত এই পকেট গেট দিয়ে কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহারসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজারো রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে যাতায়াত করে। বিগত করোনার সময়ও হাসপাতালের এই গেটটি বন্ধ করা হয়নি। ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর হাসপাতালে নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তার ফুটপাতের দোকানপাট ও সমস্ত পকেট গেট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফুটপাতের দোকানপাট পুনরায় বসলেও পকেট গেটটি খুলে দেয়া হয়নি। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাদের দাবি, রোগীদের চলাচলের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে পকেট গেটটি দ্রুত খুলে দেয়া হোক।
খেয়া নৌকার মাঝি আবুল হোসেন (৬৮) বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে হাসপাতালের এই গেট কোনোদিন বন্ধ হতে দেখিনি। চলতি সপ্তাহের শনিবার সাপে কাটা এক রোগীকে বটতলা ঘাট দিয়ে নৌকায় করে হাসপাতাল ঘাটে নিয়ে আসি। গেট বন্ধ থাকায় তারা দেয়াল টপকে হাসপাতালের ভেতরে গিয়েছিল। আমি নিজে রোগীকে দেয়াল টপকাতে সাহায্য করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটফোর্ড ইমার্জেন্সি ঘাটে প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রেতা জানান, গত বৃহস্পতিবার দেড় বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে যায়। পরে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে স্বজনরা এই ঘাট হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখে গেট বন্ধ। তারা আসলে জানত না এই গেটটি বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ। তাই আমরা শিশুটিকে কোলে নিয়ে গেটের পাশের দেয়াল টপকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে সহায়তা করি। শুনেছি, চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মর্জিনা বেগম তার নাতি মিরাজকে নিয়ে নদী পার হয়ে হাসপাতালে এসে গেট বন্ধ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ডায়াবেটিসের রোগী। নৌকায় করে পার হয়ে এসেছি। এসে দেখি গেট বন্ধ। দাঁড়িয়ে থেকে শরীর আরও খারাপ লাগছে। এভাবে রোগীদের কষ্ট দিয়ে হাসপাতাল চলে কীভাবে? বাবুবাজার ব্রিজের ওপর জ্যামের কারণে আমরা এই ঘাট হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতাম, এখন দেখি সেটাও বন্ধ।
একই ধরনের দুর্ভোগে পড়েছেন মো. ইমরান শেখ (৩৬)। তিনি তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, বাবা হাঁটতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে নৌকায় করে আনলাম। কিন্তু গেট বন্ধ দেখে রিকশা খুঁজে অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে নিয়ে যেতে হলো। কর্তৃপক্ষ কি জানে না, কত রোগী এই ঘাট দিয়ে আসে? জনগণের স্বার্থে দ্রুত গেটটি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলনের মুখে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ আলোচনার মাধ্যমে পকেট গেটগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেহেতু এই গেট দিয়ে অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা চলাচল করে তাই জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে গেটটি খুলে দেয়ার জন্য সকলের সাথে আলাপ করতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available