• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:২১:১৯ (09-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:২১:১৯ (09-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

ইয়ারিংছড়ি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া নিয়ে লুকোচুরি!

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:১১:২২

ইয়ারিংছড়ি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া নিয়ে লুকোচুরি!

মো. গোলামুর রহমান, লংগদু (রাঙাগামাটি) প্রতিনিধি: শিশুদের শিক্ষা জীবনের শুরু হয় প্রাইমারি স্কুলে। সেখানই লেখাপড়া নিয়ে লুকোচুরি হয়, তাহলে শিশুদের শেখার জায়গা কোথায়? এমন প্রশ্ন অভিভাবকদের। বলা হচ্ছে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলাধীন আটারকছড়া ইউনিয়নের উত্তর ইয়ারিংছড়ি (উল্টা ছড়ি) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।

স্কুলটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক আর সাথে তিনজন সহকারী শিক্ষক বসে গল্প করছেন। সাংবাদিক এবং জনপ্রতিনিধিদের দেখে সহকারী তিনজনই কাগজ কলম হাতে নিয়ে অফিসেই লেখালেখির কাজ শুরু করে। প্রধান শিক্ষক চুপটি মেরে বসে থাকে।

প্রধান শিক্ষক রমেন চাকমার কাছে স্কুলে চলাকালীন সময়ে ক্লাস রুম তালা ঝুলানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কই তালা মারা। যখনি সংবাদিক বলেন, আপনি আমার সাথে আসেন দেখি ক্লাস রুম খোলা আছে কিনা। তখন তিনি বলেন ছাত্র-ছাত্রী নাই তালা খুলে কি হবে।

প্রধান শিক্ষকের কাছে ঐদিনের ছাত্র-ছাত্রী হাজিরা এবং শিক্ষক হাজিরা খাতা দেখতে চাইলেও দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি। প্রধান শিক্ষক , সহকারী শিক্ষককে বলেন তোমার কাছে খাতা, আর সহকারী শিক্ষক বলে আপনার কাছে খাতা! পরবর্তীতে কেউ আর খাতা দেখাতে পারেনি।

অফিস কক্ষেই সিগারেট (ধুমপান) করার বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকেন। স্কুলের অফিসে বসে দাবা খেলা, তামাক খাওয়া নিত্য দিনের কাজ বলছেন- অভিভাবকরা।

স্কুলের বাথরুম এবং প্রাক-প্রাথমিক রুমের বেহাল দশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। যেখানে প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস রুমটি থাকার কথা পরিপাটি ও বিভিন্ন খেলনা দিয়ে সাজানো, সেখানে চেয়ার টেবিল আর বেঞ্চ ছাড়া কিছুই ছিলো না।

একজন ছাত্র ছাত্রীও স্কুলে নাই কেন?  এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক বলেন, পাশে হাই স্কুলে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে সবাই চলে গেছে। কিন্তু সঠিক বিষয়টি জানতে গিয়ে দেখা গেলো হাই স্কুলে প্রাইমারির কোনো ছাত্র-ছাত্রী যায়নি।

স্কুলটিতে একজনও মুসলিম শিক্ষক নেই। সুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মীয় শিক্ষা কিভাবে পড়ানো হয় প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, এখানে ধর্মীয় শিক্ষক নাই ৭ বছর। আমরাই ধর্মীয় শিক্ষা (ইসলাম) পড়াই। অথচ আরবি মাসলা মাসায়েল, সূরা-কেরাত, দোয়া-দুরুদ তারা পড়াতে পারার কথা না। যেখানে অনেক আলেমও মাসলা মাসায়েলে আটকে যায়, সেখানে কুরআন শরীফের সূরা গুলো নিশ্চয় তারা ধরেও দেখবে না।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষক চেয়েছি শিক্ষা অফিস শিক্ষক দেয়নি। স্কুলে একটি সরকারি ল্যাপ্টব থাকার কথা থাকলেও ল্যাপ্টবটি কোথায়? এর কোনো উত্তর দেয়নি প্রধান শিক্ষক।

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুজন চাকমা ক্লাস না নিয়ে অফিসের চেয়ারে বসেই টেবিলের উপর দুই পা তুলে দিয়ে মোবাইলে গেমস খেলার নেশায় ব্যস্ত থাকার অভিযোগ করেছে অভিভাবকরা। যার প্রমাণসহ তুলে ধরেন তারা। প্রমাণ প্রতিনিধির হাতেও রয়েছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোতালেব হোসেনের কাছে স্কুলের এ বেহাল দশার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলে ভালো করে ক্লাস হয় না, তাই ছাত্ররাও স্কুলে যায় না। অফিস কক্ষের বেহাল দশা এবং স্কুলের ল্যাপ্টবের বিষয়ে তিনি বলেন, ল্যাপ্টব একটি স্কুলে সরকারিভাবে পেয়েছি। কিন্তু এখন সেটি কোথায় আছে প্রধান শিক্ষক জানে। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা আমিও বেশ কয়েকবার বলেছি। স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি মনির হোসেন বলেন, আমরা চাই স্কুলটি পরিবর্তন করতে কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী ঠিক মত এখানে  আসে না। আবার শিক্ষকরাও তেমন মনযোগী না। যার ফলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুস্তম আলী রুপ চান বলেন, স্কুলটির বেহাল দশা দীর্ঘদিন যাবৎ। শিক্ষকদের অবহেলার কারণে ছা-ছাত্রীরা স্কুলে আসে না। পুরো স্কুলে মুসলিম কোনো শিক্ষক নাই। সবাই পাহাড়ি হওয়ায় বাচ্চারা স্কুলে আসতে চায় না। কারণ ছোট ছোট ছাত্ররা তাদের ভাষা সহজে বুঝতে পারে না। অবহেলায় দিন যাচ্ছে স্কুলটির।

অভিভাবক ও ইয়ারিংছড়ি সেনামৈত্রী স্কুলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্কুলটির শিক্ষকরা নিয়ম করে অনিয়মিত আসে।  আজ দুজন আসলে, আগামীকাল অন্য দুজন আসে। তাছাড়া এখান থেকে পাশের হাই স্কুলে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা যায়, এরা বাংলাটা পর্যন্ত বানান করে পড়তে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে পহাড়ে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস হয়ে যাবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার এম কে ইমাম উদ্দীন বলেন, যেহেতু বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি, খুব শীঘ্রই আমরা এর ব্যবস্থা নিবো। আশকরি কয়েকদিনের মধ্যে স্কুলটির পরিবেশ পরিবর্তন হবে।

এবিষয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ