• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ দুপুর ০১:৩৩:৪৮ (11-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ দুপুর ০১:৩৩:৪৮ (11-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

ক্যাম্পাস

‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘বাঙলা কলেজ’

২ অক্টোবর ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫:২৪

‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল  ‘বাঙলা কলেজ’

আফরুজা আভা, বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি: এক সময় আমাদের এই ভূখন্ড তথা পূর্ব পাকিস্থানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইংরেজি আর উর্দু মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম দেখলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার  দাবি মেনে নেয়া হলেও তখনো দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এ সময় তমদ্দুন মজলিসসহ অন্যান্য বাংলা ভাষাসৈনিক ও বেশকিছু শিক্ষাবিদ প্রচলিত উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান চালুর দাবি জানালে  উর্দুপ্রেমী ও বাংলা ভাষা আন্দোলনের  বিরোধীরা এ দাবিকে নানাভাবে ব্যঙ্গ করেন। এমনকি বাংলা মাধ্যমে পড়ালেখা চালু হলে চাকরি হবে না শুধু ‘বাঙলা মৌলবি’ জন্ম হবে বলেও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন তারা।  

এ অবস্থায় উচ্চশিক্ষাস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষার প্রচলন এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রসারের উদ্দেশ্যে একটি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই প্রয়োজনকে অনুধাবন করেই প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বেশ কিছু শিক্ষাবিদ এবং ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। ১৯৬১ সালে গঠিত এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৬২ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাঙলা কলেজ’। তৎকালীন পাকিস্থানের প্রথম বাংলা মাধ্যমের কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাঙলা কলেজের এই প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণে অনন্য অবদান রাখা লেখক ও গবেষক ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ছাড়াও প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, ডক্টর ইন্নাস আলীসহ  অন্যান্য প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ভাষাবিদগণও উক্ত কমিটিতে ছিলেন । 



১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা-পরবর্তীতে বাঙলা কলেজের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয় বকশীবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউটে। একটানা ৭-৮ বছর নবকুমার ইনস্টিটিউটে নৈশ কলেজ হিসেবে কার্যক্রম চালানোর পর রাজধানীর মিরপুরে বাঙলা কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে মোট ২৫ একর জমির সুবিশাল এলাকা নিয়ে মিরপুরের সবচেয়ে বড় এবং রাজধানীর অন্যতম বড় সরকারি কলেজ হিসেবে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সরকারি বাঙলা কলেজ।

২০২৩ সালের ১ অক্টোবর বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার ৬২ বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু এত বছর পরে এসে আজও ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে জন্ম নেয়া এই বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্ণতা পায়নি । বাংলা ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিজড়িত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী  এই  কলেজকে বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য এর আগে বেশ কয়েকবার দাবি জানিয়েছে কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ১ অক্টোবর রোববার সরকারি বাঙলা কলেজের ৬১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে বাঙলা কলেজকে  ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ করার দাবি জানিয়েছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সরকারি বাঙলা কলেজের সর্বমোট আয়তন প্রায় ২৫ একর। কলেজ প্রাঙ্গনে নতুন পুরাতন সব মিলিয়ে মোট ৮টি ভবন দাঁড়িয়ে আছে। এর মাঝে সদ্য নতুন নির্মিত ১০ তলাবিশিষ্ট সুউচ্চ ভবন দুটিতে রয়েছে লিফট সেবা, অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম এবং সুবিশাল লাইব্রেরিসহ অন্যান্য শিক্ষা ও যুগুপযোগী সুবিধা। কলেজের ছাত্রদের আবাসিক সুবিধার অংশ হিসেবে রয়েছে ২টি ছাত্রহল (আরও ২টি হল প্রস্তাবিত রয়েছে) অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে ২টি কলেজ বাস। 
কলেজের পেছনের অংশে রয়েছে লেক ও প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ। বিস্তৃত সবুজ মাঠ, দুপাশে গাছের ছায়াঘেরা রাস্তা কলেজের সৌন্দর্য্য আর প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করে।

বিভাগ ও অনুষদ
প্রতিষ্ঠাকালে শুধু উচ্চমাধ্যমিক আর ডিগ্রি কলেজ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করলেও, ১৯৮৫ সালে সরকারিকরণ এবং ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পরে কলেজটিতে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বিজ্ঞান অনুষদে ৭টি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ৪টি এবং সামাজিক ও কলা অনুষদে ৮টিসহ এই ৩ অনুষদের অধীনে সর্বমোট ১৯টি বিষয়ে অনার্স চালু আছে। ১৪টির বেশি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। ২০১৬ সালে কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
সরকারি বাঙলা কলেজে  উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্সসহ সর্বমোট প্রায় ১৮-২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। 
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ১৬৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা  অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক এবং লেকচারার পদে কর্মরত আছেন। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত আছেন প্রফেসর মো, জাহাঙ্গীর হোসেন এবং উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত আছেন প্রফেসর মিটুল চৌধুরী।

শিক্ষা ও ভাষার অগ্রযাত্রায় বাঙলা কলেজের অবদান
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলা ভাষাকে শিক্ষাসহ সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে এসেছে ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের নেতৃত্বে তৎকালীন বাঙলা কলেজের ছাত্র শিক্ষকদের সক্রিয় আন্দোলনর মাধ্যমেই শত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া চালুর পাশাপাশি বাংলা ভাষায় প্রশ্ন প্রণয়ন, বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা চালু থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল দাবি বাস্তবায়নের রূপ পায়। ১৯৮৫ সালে বাঙলা কলেজ সরকারিকরণের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাদানের প্রচলনকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বাঙলা কলেজের তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপালসহ  শিক্ষক ও অধ্যাপকগণ অনেকে অবৈতনিক, কেউবা নামমাত্র বেতনে অধ্যাপনা ও আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার আগেই বাঙলা মাধ্যমে শিক্ষাদান ও জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহারকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারি বাঙলা কলেজ ও কলেজের এসব আন্দোলন ও কার্যক্রম অগ্রহণী ভূমিকা রেখেছিল।

জাতীয় সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বাঙলা কলেজ 
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালি বিহারীরা বাঙলা কলেজ দখল করে নেয়। দীর্ঘ নয় মাস অবরুদ্ধ ছিল এ কলেজটি। এ সময় নাম পরিবর্তন করে বাঙলা কলেজের পরিবর্তে ‘উর্দু কলেজ’ নাম দিয়ে  সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল। কলেজের প্রশাসন ভবনের কিছু কক্ষকে বানানো হয়েছিল টর্চার সেল। কলেজের বিভিন্ন স্থানে বানানো হয় বধ্যভূমি আর গণকবর।

পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধকালীন এ ইতিহাসকে সংরক্ষণের উদ্যোগ হিসেবে বাঙলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খানের নেতৃত্বে একটি ‘বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সংস্কার’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জাহাঙ্গীর, কিছু শিক্ষক ও ছাত্রদের সহায়তায় কলেজ বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষকে বানানো হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি’। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ে সাজানো তাক, তথ্যচিত্র  আর ইতিহাস বিজড়িত নানা স্থিরচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যেমে ঐতিহাসিক এ কক্ষ যেন জাতীয় ইতিহাস চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও ১৯৬৯’র গণআন্দোলন, অন্যান্য অধিকার আন্দোলনসহ স্বাধীনতার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আন্দোলনে রাজধানীর এই কলেজটি সর্বদা একটি সক্রিয় অংশ হিসেবে অবদান রেখেছে।

সরকারি বাঙলা কলেজের প্রতিটি স্থাপনায়, প্রতিটি ইট পাথরের গায়ে যেন বাংলা  আর বাঙালির ইতিহাস, তাদের আর্তনাদ, তাদের জাগরণ আর তাদের বিজয়ের গল্প লেখা আছে। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ অন্যান্য সকল জাতীয় আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস যেন বাংলা কলেজেরই অভিন্ন অংশ। ইতিহাসের এই অনন্য পীঠস্থানটি একদিন তার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন লক্ষ্যপূরণ হবে, এই প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ