• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৬:৫৭:১১ (03-Aug-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৬:৫৭:১১ (03-Aug-2025)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

মধুপুর সমতল অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দিক্কা

৩ আগস্ট ২০২৫ বিকাল ০৪:৩২:১৪

মধুপুর সমতল অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দিক্কা

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: গারোদের "চু" রাখার ব্যবহৃত পাত্রকে তাদের আচিক ভাষায় "দিক্কা" বলে থাকে। এটি মূলত মাটির তৈরি একটি পাত্র। যা দিয়ে গারো সমাজে ঐতিহ্যবাহী পানীয় "চু" তৈরি ও পরিবেশন করা হয়ে থাকে। 
এমন ঐতিহ্যবাহী দিক্কা তৈরি হচ্ছে টাঙ্গাইলের  মধুপুর গড় অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামেই। দিক্কা প্রস্তুত কাজ করে চলছে অনেকের জীবিকার ব্যবস্থা। নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক নারী পুরুষও কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দিক্কা তৈরিতে। গারো মান্দিদের ঐতিহ্যের এ দিক্কা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে আশপাশের গারোদের বসবাস জেলাগুলোতেও। এমনটিই জানালেন দিক্কা তৈরির সাথে জড়িত নারী পুরুষ কারিগররা।

স্থানীয় গারো মান্দিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  তারা নিজেদের মান্দি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। মান্দিদের গারো সমাজে "চু" একটি গুরুত্বপূর্ণ পানীয়।  যা বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক আচার অনুষ্ঠান ওয়ানগালা, বিয়ে, শ্রাদ্ধ, রংচুগালাসহ পর্ব পার্বনে আতিথেয়তায় পরিবেশন করে থাকে । "চু" তৈরিতে ব্যবহৃত বীজ বা খামিরকে "চুমান্থি" এবং চালকে "বিন্নি ধানের চাল" বলে থাকে। তাদের আপ্যায়নে এ চু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের বলে জানা গেছে।

পীরগাছা গারো পল্লীতে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের ঐতিহ্যের দিক্কার নানা বিষয়। দিক্কা হলো মাটির তৈরি একটি পাত্র। যা কুমারদের হাতে তৈরি। তবে এ মাটির তৈরি পাত্রকে তাদের রীতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী আনুষঙ্গিক কিছু কাজ শেষে পরিণত হয় দিক্কা।

এ পাত্রের চারদিকে ৫-৬ টি বাঁধ দিতে হয়। পাত্রের গলার একটু নিচে আর একেবারে নিচের দিকে। তারপর খাড়াভাবে বেত দিয়ে সাজানো সুন্দর শৈল্পিক ভাবে বেঁধে দেয়। দিক্কা বসানোর জন্য পাত্র নিচে বা তল অংশ বাঁশ কাঠের পিঁড়ির মতো দিয়ে বাঁধ দেয় যেন সব স্থানে সহজেই দিক্কা টি বসানো যায়।

পীরগাছা গ্রামের দিক্কা তৈরির কারিগর চিত্রা নকরেক বলেন, কুমার বাড়ি থেকে পাত্র এনে বেত দিয়ে বাঁধানো হয়। ৫-৬ টা বাঁধাই করে বাঁশ বা কাঠ দিপ্তিবিং করা হয়।

দিক্কা সর্ব একদিন প্রথম জল ভরে রেখে পরের দিন সরিষার তেল দিয়ে রোদে শুকাবে। পরে চুলায় উলটিয়ে দিলে তাপে রঙ কালো হবে। তারপর দুইতিন পর ভাত রান্না করে হাড়িতে দিবে। ভাত পচানোর জন্য কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হবে। সর্ব নিম্ন ১০ দিন থেকে ৬ মাস পর্যন্ত রাখা যাবে। বাকর, চালের গুড়া দিয়ে চু প্রস্তুত করা হয়। সাথে জান্থি দিয়ে দিবে।

তিনি জানান, ফং দিয়ে নারী পুরুষ উভয়ই পরিবেশন করে থাকে।  তিনি অনেক দিন যাবত দিক্কা তৈরি করে যাচ্ছে। আকার ও প্রকার ভেদে প্রতিটি দিক্কা আটশ' থেকে চার পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। তারমতে,  অক্টোবর নভেম্বর মাসে বেশি বিক্রি হয়। কারণ ডিসেম্বরে বড় দিন। বিয়ে শ্রাদ্ধও বেশি হয় তখন। তখন ২৫-৩০ টা বিক্রি করা যায়।  

তার তৈরিকৃত দিক্কা ঢাকা, টাঙ্গাইল, ধনবাড়ি, ঘাটাইল ও ময়মনসিংহ বেশি বিক্রি হয়ে থাকে বলে তিনি জানালেন ।

চিত্রা নকরেকের মতো গায়ড়া,পীরগাছা, জয়নাগাছাসহ বিভিন্ন গ্রামে দিক্কা তৈরি করা হয়।

স্থানীয়রা জানালেন, গারো সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক শিষ্ঠাচার ও কৃষ্টির বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে এই পানীয়। গারোদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের পর ক্লান্তি দূর করার জন্য চু পান করা একটি স্বাভাবিক রীতি। কোনো কোনো অনুষ্ঠানে ভাত মাংস খাওয়ানোর চেয়েও চু পরিবেশন করাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। যদি কোনো কারণে সে অনুষ্ঠানে চু দিয়ে আপ্যায়ণ করা না হয় তাহলে অতিথিরা অনুষ্ঠান কর্তার প্রতি সন্তুষ্ট হন না। তাই যেকোনো অনুষ্ঠানে চু এর পরিবেশন অনেকটাই আবশ্যকের মতোই।

গারো সমাজে চু পান করার কিছু নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। প্রাচীন গারোরা চু পানের পূর্বে বিভিন্ন দেবদেবীর স্মরণে অল্প পরিমাণ চু মাটিতে ঢেলে উৎসর্গ করতো হয় বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছে।

উৎসব অনুষ্ঠানে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে গেলেও আপ্যায়নের শেষে চু দিতে হয়। এতে সরবজনরা মনে করে তাদের আতিথেয়তা পরিপূর্ণ হয়েছে। এভাবে যুগ যুগ ধরে চলছে আসছে সমতল এলাকার গারো সম্প্রদায়ের মান্দিদের চু'র ঐতিহ্য।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামে মসজিদের উদ্বোধন
৩ আগস্ট ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:২৮:২৩




৫ আগস্ট দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ
৩ আগস্ট ২০২৫ বিকাল ০৫:৩৮:৪০