মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে।
তিন ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেনের পকেট থেকে নগদ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়, যেটি দুদক কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী ঘুষের টাকা। অভিযানের সময় তদন্ত কাজে সহযোগিতার পরিবর্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাংনী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে।
২৯ মে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করেন দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বুলবুল হাসান রিয়াদ। তার সঙ্গে ছিলেন উপসহকারী পরিচালক সাইদুর রহমানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে সহকারী পরিচালক বুলবুল হাসান রিয়াদ জানান, আমরা যথাযথ পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য ভূমি অফিসে প্রবেশ করি। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন আমাদের পরিচয় যাচাইয়ের নামে অহেতুক প্রশ্ন করেন এবং আমাদের কার্যক্রমে বারবার বাধা দেন। একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল আমাদের সহযোগিতা করা, কিন্তু তিনি উল্টো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে সাহারবাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেনের দেহ তল্লাশির সময় তার পকেট থেকে ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়, যেটি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষ বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সাহারবাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নামজারি, জমাভাগ, খাজনা প্রদানসহ যেকোনো সেবার জন্য নির্ধারিত ফি ছাড়াও ঘুষ না দিলে ফাইল এগোয় না। এই অভিযোগের কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেন।
একজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একটা জমির নামজারি করতে গিয়ে কয়েকবার অফিসে যেতে হয়েছে। বারবার ঘুরিয়েও টাকা ছাড়া কাজ করেনি। এবার দুদক এসে তাকে হাতেনাতে ধরেছে শুনে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।
দুদকের অভিযানকালে অভিযুক্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে অভিযানের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি শুধু দুদক কর্মকর্তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছিলাম। তারা নিজেরাই বলেছেন, অফিসে কোনো লিখিত অভিযোগ ছিল না। তাই আমি জানতে চেয়েছিলাম, জাকির হোসেনের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা কেন জব্দ করা হলো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তবে দুদকের কর্মকর্তারা তার বক্তব্যকে অস্বীকার করেন। তারা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং দেহ তল্লাশিতে ঘুষের টাকাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ধরা পড়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দুদক যদি অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণসহ আমাদের কাছে উপস্থাপন করে, তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available