• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৬:২৮:০৯ (01-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৬:২৮:০৯ (01-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

নদীতে মাছের আকালে পেশা পরিবর্তন করছেন জেলেরা

১৮ এপ্রিল ২০২৪ সকাল ১০:৩৫:৩৩

নদীতে মাছের আকালে পেশা পরিবর্তন করছেন জেলেরা

রংপুর ব্যুরো: ভরা চৈত্র মাসের বুক জুড়ে পানি শুকিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে উত্তরের রংপুর অঞ্চলের খরস্রোতা তিস্তা নদী। এর অববাহিকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বালুচর। তাই লেগেছে মাছের আকাল, আর পেশা পরিবর্তন করছেন জেলেরা। হুমকির মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য। বর্ষা এলেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তা পাড়ের দু’কুলের মানুষ।

নদী ভাঙন আর প্রবল স্রোতে ভেসে যায় তিস্তা পাড়ের মানুষের স্বপ্ন ফসলি জমি, বসত ভিটাসহ স্থাপনা। আর এখন শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। হাটু পানি ভেঙ্গে হেঁটেই নদী পার হচ্ছে মানুষ আর গবাদি পশু। নদীর পাড়ে নেই নৌকা, মাঝি-মাল্লাদের হাঁক ডাক, জেলেদের মাছধরার ব্যস্ততা। নিরাশায় বালুচরে থমকে গেছে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা আর জীবনের হালচিত্র।

নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গভীর করে নদীর তলদেশ খননের মাধ্যমে দুইপাড়ে বাঁধ দিয়ে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করলে তিস্তা ফিরে পাবে চিরচেনা রূপ।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিম বঙ্গের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। এরপর নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে এই তিস্তা। তিস্তা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশের অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।

উজানে গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ফলে পানির অভাবে বাংলাদেশ অংশের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবন যাত্রা, জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে বালুচর পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। ফলে ব্যারাজ, তিস্তা রেলসেতু, সড়ক সেতু ও গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু দেখে মনে হয় যেন এগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু ধু বালু চরে।

নদী পাড়ের জেলেরা জানান, এক সময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ধরা পড়তো। সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চালাতেন এলাকার জেলেরা। সে সময়ের তিস্তা নদীর মাছকে ঘিরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা বন্দরে শুঁটকির আড়ত গড়ে উঠেছিল। যেখান থেকে সারা দেশে যেত তিস্তা নদীর সুস্বাদু শুঁটকি। এখন নদীতে মাছই পাওয়া যায় না।

তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের জেলে জীতেন্দ্র নাথ জানান, আগে এ নদীতে দিনভর মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। মাছের শুঁটকি বানিয়ে সারা বছর বিক্রি করতাম। এখন নিজের খাবার মাছও পাওয়া যায় না। আশ পাশের গর্তে থাকা মাছ ধরে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে।

এদিকে তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষায় একটু পানি হলেই দু’কুল উপচে উভয় পাড়ে বন্যা হয়। নদীতে পানির অভাবে বর্ষার সময় নির্ধারণ করা নদীর বিপদসীমা রের্কড কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমনিরহাট দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে তিন বার পানির স্তরের রেকর্ড পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা রের্কড ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার র্নিধারন করা হয়েছে।

নদীর প্রবাহ মাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি থাকা প্রয়োজন ১৯ হাজার কিউসেক। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহ প্রয়োজন প্রায় ১৪ হাজার কিউসেক। আর নদীর অস্তিত্ব বাঁচাতে প্রয়োজন আরও পাঁচ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বর্ষায় গড়ে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার কিউসেক পানি আসে। এই পানি লালমনিরহাট অংশ দিয়ে নদীর দু’কুল উপচে প্রবাহিত হওয়ার কারণে স্বাভাবিক গতিপথ পরির্বতন হয়ে বন্যা আর ভাঙ্গন দেখা দেয়। ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্ট থেকে নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়াসহ পানি সরবরাহের জন্য প্রধান সেচ খালের আওতায় থাকা এলাকায় চাষের জন্য পানি দিতে গেলে আরও ২ হাজার ৮’শ কিউসেক পানি প্রয়োজন। ভরা সেচ মৌসুমে এই ক্যানেল গুলোতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২’শ কিউসেক পানি পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানান, লালমনিরহাটের চর কেন্দ্রীক ৮ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হয়। এর মধ্যে ভুট্টার পরিমাণ সব থেকে বেশি। কিন্তু এসব চরে অপরিকল্পিত ভাবে সড়ক, বাজার, ঘাট-বাড়ি ও নানা কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদের প্রকল্পের কারণে নদী হারিয়ে ফেলছে প্রাকৃতিক রূপ।

রংপুর অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, রংপুর বিভাগের চরাঞ্চলে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। এসব ফসল রফতানি হচ্ছে শ্রীলংকা, জাপান, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এতে করে এসব অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি কৃষকের আর্থ সামাজিক উন্নতি হচ্ছে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ