• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ১১:৩৬:৪২ (11-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ১১:৩৬:৪২ (11-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

শান্তিচুক্তির ২৬ বছরেও পাহাড়ের আকাশে উড়েনি শান্তির পায়রা

২ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল ০৮:৪১:০৫

শান্তিচুক্তির ২৬ বছরেও পাহাড়ের আকাশে উড়েনি শান্তির পায়রা

রাঙামাটি প্রতিনিধি: আজ ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি তথা শান্তিচুক্তির ২৬ বছর পূর্তি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পাহাড়ে প্রায় আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে চলা শান্তি বাহিনী নামক গেরিলা বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটানোর প্রত্যাশাই ছিল চুক্তির মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু চুক্তির ২৬ বছর পরও পাহাড়ের বাতাসে বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে চলছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত। এই সংঘাতের কারণে পার্বত্য শান্তি চুক্তির দীর্ঘ ২৬ বছর পরও পার্বত্য জনপদে শান্তি আসেনি। পাহাড়ের চুক্তির পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাাজিক সংগঠন পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার বন্ধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনীর অপারেশন উত্তোরণ জোরদার করার দাবি জানিয়ে আসছে।

এছাড়া চুক্তির পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে সেনাবাহিনী যে উন্নয়ন কার্যক্রম তরান্বিত করেছে তা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। পাহাড়ের সাধারণ মানুষের দুর্যোগের সময় সেনাবাহিনীর অবদান চোখে পড়ার মতো।

১৯৯৭ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।

সরকার চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়ন করার কথা বললেও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অভিযোগ চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অনেক ধারা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পাহাড়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে শংকা, ক্ষোভ আর হতাশা রয়েগেছে। এছাড়া চুক্তির পরেও পাহাড়ে আঞ্চলিক কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও হানাহানি লেগে থাকার ফলে শান্তি মিলেনি এই পাহাড়ী জনপদে। চুক্তির পর থেকে পাহাড়ের খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিরাজ করছে।

পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আঞ্চলিক একটি দল থাকলেও বর্তমানে পাহাড়ের ৫/৬টি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, এমএলপি, কেএনএফ। এই সংগঠনগুলো তাদের নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে প্রতিনিয়ত পাহাড়ে সংঘাত লাগিয়ে রেখেছে।

রাঙামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, যাদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করতে পেরেছি তাদেরকেই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নের লক্ষ্যে। যারা চুক্তি করে, চুক্তির প্রতি তাদের চেয়ে আর কারো দরদ বেশি হতে পারে না। চুক্তি সম্পদনকারী পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমরা অকপটে স্বীকার করি, শান্তিচুক্তির মূল ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয় নাই, বাস্তবায়িত হওয়া দরকার, পূর্ণবাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

দীপংকর তালুকদার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং সাহসের কারণে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং তিনি আন্তরিক বলেই চুক্তির অধিকাংশ দফা বাস্তবায়নও হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সকল চুক্তির মধ্যেই কিছু জটিল দিক থাকে, যা বাস্তবতার আলোকে পারস্পরিক সমঝোতা ও সংলাপের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি রাখে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সেই বাস্তবতা সবাই অনুধাবন করতে পারে না।

পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তির ফলে এক সময় পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের তকমা পাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের আলোয় ঝলমল করছে। এটা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বড় একটি প্রমাণ। পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো, দুর্গম এলাকায় যেখানে বিদ্যুতের সুবিধা দেয়া যাচ্ছে না সেখানে সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সুবিধা দেয়া হয়েছে, অসংখ্য ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর জাতীয়করণ সর্বপোরি পাহাড়ের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। আগামীতে ক্ষমতায় এলে চুক্তির বাকি ধারাগুলোও বাস্তবায়নের জন্য যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তার সব কিছুই করবো এবং এটা আমাদের পক্ষেই সম্ভব, শুধুমাত্র পাহাড়ের মানুষের মাঝে এই বোধ জন্মাতে হবে।

পাহাড়ে অস্ত্রবাজী ও চাঁদাবাজি কথা তুলে ধরে বলেন, শান্তিচুক্তির স্বপক্ষের শক্তি সকলে সম্মেলিতভাবে কাজ করার একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো প্রধান শর্ত। কিন্তু আমরা কি দেখছি, শান্তিচুক্তির একটা পক্ষ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তিন পার্বত্য জেলায় উঠে পড়ে লেগেছে। আজ পর্যন্ত এই শান্তিচুক্তির ২৬ বছরে অবৈধ অস্ত্রধারীদের হাতে যারা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে আসছে তাদের হাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া অন্যকোন রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মী নিহত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তাহলে আওয়ামী লীগকে যদি নিশ্চিহ্ন করতে চায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যদি হত্যা করে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে চায়, তা হলে এটাতো আমরা মনে করছি বোকার সঙ্গে বসবাস।

তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে দুই পক্ষের ভীতরে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে এটা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে বড় অন্তরায়। আমরা হতাশ না হয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবো, অস্ত্র হাতে নিবো এই ধরনের শ্লোগান না দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের সমস্যা কোনো দিনও সমাধান হবে না। তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য সমস্যা, কিন্তু প্রধান অন্তরায় নয়। প্রধান অন্তরায় হলো আমাদের মধ্যে আর সরকারের মধ্যে একটা বুঝাবুঝির অভাব। এটার কারণে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের কি ভাবনা সেটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। সরকার যেভাবে যাচ্ছেন সেভাবে যাবেন নাকি যথাযথ রাস্তায় আসবেন। ঠিক ট্রেকে আসবেন, না ভুল ট্রেকে যাবেন। ভুল ট্রেকে গেলেতো সমাধান হবে না। কিন্তু অন্যান্যগুলোতো উপসর্গ। যতই সরকার সময় কালক্ষেপণ করবে, ততই দলবাজি হবে, অস্ত্রবাজি হবে, চাঁদাবাজি হবে, আরও দল গজিয়ে উঠবে। তখন শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নে আরও বেশি জটিল আকার ধারণ করবে। তাই আমরা চাই সরকার শান্তি চুক্তি যেসব ধারা অবাস্তবায়িত হয়ে আছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বয়ে আনুক।

এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজি মজিবুব রহমান বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছরে এসেও পাহাড়ে জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসহ (কেএনএফ) একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে। চলছে অস্ত্রের মহড়া, চলছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুম, খুন ও অপহরণ চলছে। তাদের হাতে পাহাড়ি-বাঙালি সকলে জিম্মি। পার্বত্য চুক্তির শর্তানুযায়ী পাহাড় থেকে একটি ব্রিগেডসহ ২৩৮টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে ৩০টি বিভাগ, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে ৩০টি বিভাগ ও বান্দরবান জেলা পরিষদে ২৮টি বিভাগ হন্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চুক্তি করার সময় বাঙালি জনগোষ্ঠীর জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে তাদের অ-উপজাতী আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধায় উপজাতীয়দের নানা অগ্রাধিকার শর্তযুক্ত করে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় নানা সুবিধা নিয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো বাংলাদেশের চেতনা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও উন্নয়ন বিরোধী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তারা দেশি-বিদেশি ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে শান্তিচুক্তি ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ ২ ডিসেম্বর শনিবার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টায় রাঙ্গামাটি জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে গিয়ে র‌্যালিটি শেষ হবে।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে র‌্যালি ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিকত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।

এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম-সচিব) মোহা. আশরাফুল ইসলাম, রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আনোয়ার লতিফ খান, রাঙামাটি রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল এরশাদ হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ