• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ ভোর ০৪:৩২:৩৭ (12-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ ভোর ০৪:৩২:৩৭ (12-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের লাঙ্গল

২৩ নভেম্বর ২০২৩ সকাল ১১:২৭:৫২

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের লাঙ্গল

মেহেরপুর প্রতিনিধি: দিন যত যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী স্মৃতিগুলো যেন এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলার সবুজ শ্যামল মাটির বুকে এক সময় গরু-মহিষের লাঙ্গল দিয়ে চাষ হতো। কালের বিবর্তনের সেগুলো আজ প্রায় হারিয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এগুলোকে দেখতে হয়তো কোনো জাদুঘরে যেতে হবে। কারণ এগুলো গ্রামের চাষিদের কাছে এখন আর তেমন দেখা যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলো বিলীনের পথে।

১০ থেকে ১৫ বছর আগেও মেহেরপুরের বামন্দী হাঁটে দেখা যেত লাঙ্গলের ইশ, জোয়াল বিক্রয় হচ্ছে। কিন্তু গাংনী উপজেলার সমস্ত হাট খুঁজেও এখন আর দেখা মেলে না সেই লাঙ্গল ও জোয়ালের।

দেশের ৮০ ভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। আজ ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও কৃষকের জমি চাষের মূল অবলম্বন ছিল লাঙ্গল। ভোর হলেই গরু, লাঙ্গল, জোয়াল নিয়ে বাড়ি থেকে জমি চাষ করার জন্য বেরিয়ে যেত কৃষক। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে এসব। এসেছে নানা পরিবর্তন। কৃষিতে ছোঁয়া লেগেছে আধুনিকতার।

তবে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকজন চাষি এখনো পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই ৪০ বছর ধরে মহিষের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে বেড়াচ্ছে মেহেরপুরে গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আশ্বব আলী।

স্থানীয়রা জানান, লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের সেই সময়টা ছিল অনেক আনন্দের। লাঙ্গল বাইতে বাইতে কত মধুর গান শোনা যেতো তাদের কণ্ঠে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় লাঙ্গলের সাথেও হারিয়ে গেছে সে সব আনন্দ। লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষের সময় একপ্রকার শারীরিক কসরত হয়ে যেত মানুষের। সেই সময়টায় আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে আর সেই সাথে পরিবর্তন হয়েছে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের।

উপজেলার ঝোরাঘাট গ্রামের সিপারুল ইসলাম বলেন, বাংলার রূপের বর্ণনা করতে গেলে কৃষি উপকরণের কথা অবশ্যই মনে আসবে আর এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে হালের গরুর কথা। কৃষক লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যেত আর কিষাণী দুপুর হলেই খাবার নিয়ে মাঠে হাজির হতো। ২০ বছর আগে আমারও গরু ছিল কিন্তু যখন আধুনিকতার ছোঁয়া এলো তখনই পাওয়ার টিলার কিনলাম। লাঙ্গল গরু দিয়ে চাষের সমাপ্তি ঘটলো। কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে।

মো. আশ্বব আলী বলেন, আমি বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রায় ৪০ বছর ধরে মহিষের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে যাচ্ছি। এটা শুধু আমার কাছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নয়, এটা আমার বাবার স্মৃতিও বহন করে। আল্লাহ যত দিন বাঁচিয়ে রাখে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে যাব। আশেপাশের দুই-তিন গ্রামের মধ্যে শুধু আমার কাছে এই লাঙ্গল রয়েছে। দিন দিন একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যগুলো।

লাঙ্গল, ইশ, জোয়াল বানানোর কারিগর মোহাম্মদ বদর উদ্দিন বলেন, আমরা পাঁচ ভাই। এর মধ্যে চার ভাই ইশ, লাঙ্গল তৈরি করতাম। এগুলো বামন্দীসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রয় করতাম। আজ থেকে ১৫ বছর আগেও এর কদর ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাওয়ার টিলার ও ট্রাকটর আসলো। এরপর থেকে আস্তে আস্তে প্রায় হারিয়ে গেল লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ। এখন মাঝে মাঝে কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়। ইশ, জোয়াল তৈরির কারিগর আমার সেই তিন ভাই অনেক আগেই মারা গেছে। আমিও এসব কাজ অনেক আগেই বাদ দিয়েছি।

সাবেক ইউপি সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তন ঘটেছে। এখন মাঠে গেলে দেখা যায় ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হচ্ছে। এক সময় মানুষ লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করার জন্য আলাদা কদর দিয়ে গরু পালন করত। গরুর মুখে ব্যবহার করা হতো ঠুসী। কাঁধে দেওয়া হতো জোয়াল। চাষি মুখে শব্দ করতো ও হাট, হাট, ঘোর, ঘোর, হৈ হৈ। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ