আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পেন্টাগনের রিপোর্ট নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ইরানে মার্কিন হামলার ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস 'রাষ্ট্রদ্রোহিতার' শামিল। খবর বিবিসি’র।
তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, “এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো এবং এটি অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। যারাই এর জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”
স্টিভ উইটকফ আরও জানান, তিনি সব ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন প্রতিবেদন পড়েছেন এবং তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সেগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে’ এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ট্রাম্প নিজেও উইটকফের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্রুথ সোশালে ফক্স নিউজ সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন। সেখানে উইটকফকে উদ্ধৃত করে লেখা ছিল- “আমরা ফোর্দোতে ১২টি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলেছি। কোনো সন্দেহ নেই, তা ছাদ ভেদ করেছে এবং কোনো সন্দেহ নেই, এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং যেসব প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি, তা একেবারেই হাস্যকর!”
প্রসঙ্গত, হামলার তিন দিনের মাথায় পেন্টাগনের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ ধ্বংস হয়নি। ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি মূলত স্থলভাগের অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ভূগর্ভস্থ মূল স্থাপনাগুলো অনেকটাই অক্ষত রয়েছে।
গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির সহযোগী সিবিএস নিউজকেও এ তথ্য জানিয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মূল্যায়ন ছিল কী?
সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় ছিলই। কারণ এখনো কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই যে এই বোমাবর্ষণ ইরানের গভীর ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে পেরেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, শনিবারের হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি "সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস" হয়েছে।
শনিবারের ওই হামলার পর ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সেগুলো আগেই খালি করা হয়েছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সরিয়ে নেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
এর বিপরীতে পাল্টা অবস্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই অভিযানকে সফল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
হামলার পরদিন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই হামলার পুরো বিবরণ তুলে ধরেছিলেন এবং এটিকে তাদের বড় সফলতা হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মি. হেগসেথ বলেছিলেন, “আমরা যা দেখেছি তাতে স্পষ্ট যে, আমাদের বোমাবর্ষণ ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা বলছে এই বোমা কার্যকর ছিল না, তারা আসলে প্রেসিডেন্ট এবং এই সফল অভিযানের অবমূল্যায়ন করছে।”
ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির সভাপতি এবং গোপন পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন, মার্কিন হামলায় ইরান যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার অর্থ হল তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরুদ্ধার করতে "উল্লেখযোগ্য সময়, বিনিয়োগ এবং শক্তির প্রয়োজন হবে"।
তিনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেন, "ইরান বর্তমানে "মার্কিন ও ইসরায়েলের নিবিড় নজরদারিতে রয়েছে," এবং যদি তারা কর্মসূচি পুনরায় গড়তে চায়, তাহলে আরও হামলার ঝুঁকি তৈরি হবে"।
সোমবার, ইরান পাল্টা হামলায় কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যেখানে কয়েক হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। ওই হামলার বেশিরভাগই প্রতিহত হয় এবং কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানান। উভয় দেশই পরে জানায়, তারা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available