আনসারুজ্জামান সিয়াম, গবি প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় বাংলাদেশের দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধ। আমাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা ও প্রত্যাশা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
ঐক্যবদ্ধভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে
স্বাধীনতার সংগ্রামে জয়ী হলেও আমাদের তৃপ্ত হবার সুযোগ নেই। এখনও জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় সংকীর্ণতা আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথে বড় বাধা হওয়ায় আমরা অর্ধ শতাব্দী পরেও সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি। শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রসার ঘটলেও শিক্ষা খাত অনেকটা বাণিজ্যনির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করতে হবে, শিক্ষা-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে, যাতে উন্নত মানবিক গুণসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি বিপুল জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, পরিবেশ দূষণ, ডিজিটালাইজেশনের অভাব, সমন্বয়হীনতা এবং বেকারত্বের মতো অভিশাপসহ সকল সমস্যার সমাধান করে একটি সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। সব জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারাটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
রিয়া মোদক, ৩য় বর্ষ, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ নিয়ে শঙ্কিত
প্রত্যেক জাতিরই এমন কতকগুলো গৌরবোজ্জ্বল জাতীয় দিবস রয়েছে, যেগুলোকে জাতি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে। বাঙালি জাতির সে রকম একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন স্বাধীনতা দিবস। দিনটি আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা। স্বাধীনতার ইতিহাস আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও বিচার নিয়ে আজও শঙ্কায় বাঙালি জাতি। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে সব জটিলতার অবসান অচিরেই ঘটবে।
মোশারফ পারভেজ, ২য় বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে
২৬ মার্চ একইসাথে স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় দিবস! ১৯৭১ এর ২৬ মার্চের ঘোষণার চূড়ান্ত ফলাফল ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই জনপদ ও জাতির ভাগ্যাকাশের রক্তিম সূর্য উদিত হওয়ার দিন। স্বাধীনতার পর থেকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও জাতি। অবকাঠামোগতভাবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হলেও, মেধা-মননে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এখনো প্রশ্নবিদ্ধ? ফলে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আজ রক্তে রঞ্জিত হয় সীমান্তের কাঁটাতার। তাই, জাতীয় দিবসে তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই আহবান জানাই, উত্তাল মার্চের রক্তিম সেই উপাখ্যানকে বুকের মধ্যে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে নিরলস কাজ করে যেতে হবে আমাদের।
শাদউদ্দিন পারভেজ, ৪র্থ বর্ষ, কৃষি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতিহাস যেন বিকৃত না হয় সেই খেয়াল রাখতে হবে
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃংখল ভাঙার গৌরবময় দিন আমাদের স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতাকে গতিময় করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দিনেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের নাগরিক হিসেবে যে দায়িত্বগুলো আছে তার যথাযথ পালন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারি। দিনটিকে উদযাপনের পিছনে শুধুমাত্র ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নয় বরং এর থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক বিষয় জড়িত। একজন তরুণী হিসেবে আমি মনে করি নিজ দেশের গৌরবময় ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি, ইতিহাস যেন বিকৃত না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। দেশপ্রেম এবং ব্যক্তি উদ্যোগই পারে আমাদের স্বাধীনতাকে মহিমান্বিত করে তুলতে।
মোসা. ফাহমিদা আক্তার, ৩য় বর্ষ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available