সিলেট প্রতিনিধি: যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় পুলিশ কর্মকর্তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ২৮ আগস্ট সোমবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান ভুইঞা এ আদেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুর হওয়া স্বামী পুলিশের পরিদর্শক মানিকুল ইসলাম। তিনি বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি রাশিদা সঈদা খানম। তিনি বলেন, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন মানিকুল। সোমবার স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রবাসী এক নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেন মানিকুল। বিয়ের পর স্ত্রী কানাডায় চলে যান। পরবর্তীতে মানিকুল তাকেও কানাডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মামলার বাদীকে চাপ দেন। এ পরিস্থিতিতে মামলার বাদী প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে মানিকুলের কানাডার ভিসার ব্যবস্থা করেন। তবে মানিকুল কানাডায় যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং গুলশান থানায় তার পোস্টিংয়ের জন্য ৫০ লাখ টাকা চান। অর্থ দিতে ভিকটিম অপারগতা জানালে মানিকুল তাকে বেধড়ক মারধর করেন।
২০১৭ সালের ১৮ জুন তিনি কানাডা থেকে বাংলাদেশে এলে তাকে তার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মানিকুল নিজের সঙ্গে আনা একটি কালো রঙের গাড়িতে তুলেন। গাড়ি বিমানবন্দর থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর মানিকুল আবারও তার কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মানিকুল তার হাতে থাকা ওয়্যারলেস ও মোবাইল দিয়ে ভিকটিমের নাকে-মুখে এলোপাথাড়ি আঘাত করেন এবং পায়ের বুট জুতা দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে ডান পায়ের সব আঙুল থেঁতলে দেন। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয় এবং কানের পর্দা ফেটে যায়। একপর্যায়ে মানিকুল তার পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার এবং পাঁচ হাজার কানাডিয়ান ডলার ছিনিয়ে নেন।
ঘটনার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাড়িটি নবীগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউশকান্দি হিরাগঞ্জ বাজারে পৌঁছলে মানিকুল ফের তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় তার চিৎকারে পাশ দিয়ে যাওয়া অপর একটি অজ্ঞাত গাড়ি তাদের বহনকারী গাড়িটিকে আটকায়। মানিকুল ভিকটিমকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। তখন উপস্থিত স্থানীয় জনতা ভিকটিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান এবং তাৎক্ষণিকভাবে নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে জানানো হয়।
মানিকুলের এ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে নবীগঞ্জ থানায় তৎকালীন অভিযোগ দায়ের করলেও মানিকুল ওই সময় হবিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) পদে কর্মরত থাকায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available