আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নোবেল শান্তি পুরস্কার বিতর্ককে ঘিরে সুইডেনে নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জ। ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার প্রদানকে তিনি ‘তহবিলের গুরুতর অপব্যবহার’ এবং সুইডিশ আইনের আওতায় ‘যুদ্ধাপরাধে সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

১৯ ডিসেম্বর শুক্রবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মাচাদোকে পুরস্কারের অর্থ হিসেবে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১১ লাখ ৮০ হাজার ডলার) প্রদান বন্ধে পদক্ষেপ চেয়েছেন আসাঞ্জ। ১৭ ডিসেম্বর বুধবার দায়ের করা অভিযোগপত্রে নোবেল ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বসহ ৩০ জনকে তহবিল অপব্যবহার, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সহায়তা এবং আগ্রাসনে অর্থায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।


গত অক্টোবরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্তির শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য মাচাদোকে পুরস্কৃত করে নোবেল কমিটি। তবে আসাঞ্জের মতে, এতে নোবেল পুরস্কার শান্তির হাতিয়ার থেকে যুদ্ধের উপাদানে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, মাচাদো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপকে সমর্থন করছেন, যার লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এটি নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালের উইলে বর্ণিত আদর্শের পরিপন্থী বলে দাবি করেন আসাঞ্জ।
মাচাদোর নোবেল জয় শুরু থেকেই বিতর্কিত। গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও হামলার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছেন। পুরস্কার ঘোষণার পর তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে সমর্থন জানান এবং ক্ষমতায় গেলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ভেনেজুয়েলা বিরোধী কঠোর নীতির প্রতি সমর্থন জানান। ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোকে মাদকচক্রের সঙ্গে যুক্ত দাবি করলেও সে বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলা ও লাতিন আমেরিকার উপকূলে কথিত মাদকচক্রের নৌযান লক্ষ্য করে ২০টির বেশি সামরিক হামলার নির্দেশ দেন, এতে ১০৪ জন নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান বাহিনীর ব্যাপক মোতায়েন ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
আসাঞ্জ বলেন, এসব সামরিক অবস্থান শান্তির মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং নোবেলের তহবিল ‘যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে’। শান্তি পুরস্কার নরওয়েতে ঘোষিত হলেও আর্থিক সিদ্ধান্তে স্টকহোমভিত্তিক ফাউন্ডেশন দায় এড়াতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠার পর ২০১০ সালে চেলসি ম্যানিংয়ের ফাঁস করা তথ্য প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন আসাঞ্জ। ধর্ষণ মামলায় প্রত্যর্পণ এড়াতে ২০১২ সালে তিনি লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন এবং সাত বছর সেখানে অবস্থান করেন।
২০১৯ সালে তাকে লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে পাঠানো হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের এক অভিযোগে দোষ স্বীকার করে ২০২৪ সালে মুক্ত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। বর্তমানে নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘিরে তার অভিযোগ নতুন আন্তর্জাতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available