বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি: দেশের খুচরা বাজারে সবজির দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। কাঁচা মরিচ, বেগুন, করলা, পটল, বরবটি, শশা, লাউ, ঢেঁড়শ, কচুঁর লতি, কাঁচা পেঁপে, মিস্টি লাউসহ প্রায় প্রতিটি সবজির দামই আগের চেয়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি।
এরই মধ্যে উৎপাদনের মৌসুম না হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
জামালপুরের বকশীগঞ্জে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, যেখানে এক মাস আগেও এটি ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। করলার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পটল ৬০থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, শশা ৬০ টাকা বরবটি ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজার থেকেই তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ভোক্তারা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। বকশীগঞ্জ বাজারে দেখা যায়, এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দুই হাজার টাকায় সপ্তাহের সবজির বাজার করতে পারছি না, সবজিই এখন যেন সোনার চেয়ে দামি।
এই দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা এবং কৃষিবিশ্লেষকরা বলছেন-প্রবল বর্ষা, জলাবদ্ধতা ও ফসল নষ্ট হওয়া। চলতি মৌসুমে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে বহু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তাছাড়া সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা ও পরিবহনে সমস্যা থাকায় কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ঠিকমতো বাজারে পৌঁছাচ্ছে না।
খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. আজিম মিয়া জানান, টানা বৃষ্টির কারণে সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফলে বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, কৃষক সময় মত ফসল উঠাতে না পারায় বাজারে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে এ কারণে সবজির দাম অনেকটা বেশি।
সবজি চাষি মো. সোলাইমান মিয়া বলেন, বাজারে সবজির কোনো সংকট নেই যা উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে সংকট হওয়ার কথা নয় কিন্তু আমাদের কাছ থেকে পাইকাররা কম দামে নিয়ে বাজারে গিয়ে তা দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা যারা সবজি চাষ করছি মূলত এর ন্যায্য মূল্য আমরা পাচ্ছি না। মাঝখান থেকে অন্য একটি ব্যবসায়ী দল সিন্ডিকেট করে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে অধিক দামে বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছে আর আমরা খেটে মরছি।
ভোক্তারা জানান, বাজারে সবজির বর্তমান যে দাম তা একজন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, শাক থেকে শুরু করে লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, পটল, মরিচ, ইত্যাদি সবজির আকাশচুম্বী দাম,১৫শত টাকায় এক সপ্তাহের সবজি বাজার হচ্ছে না যা একজন খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় দামের ঊর্ধ্বগতির পেছনে রয়েছে সিন্ডিকেটের প্রভাব, মজুতদারদের কারসাজি ও বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। কৃষক জমি থেকে যেই দামে সবজি বিক্রি করছেন, সেই সবজিই খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পায় না, আর ভোক্তা চড়া দামে পণ্য কিনে। মাঝখানে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের বড় অংশ নিচ্ছে।
এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক, দেখছে আশার আলো, হতাশ না হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন। জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর সহ বিভিন্ন এলাকা জোরে চাষিরা আগাম শীতকালীন ফুলকপি, শিম, গাজর, মুলা, লাউ, পাট শাক, পুঁই শাক, লাল শাক, পালন শাক ইত্যাদি সবজি আগেভাগেই বপন করা শুরু করেছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে চারা রোপণও করেছেন।
শেখপাড়া এলাকার করলা ও বেগুন চাষি মো. খোরশেদ মিয়া বলেন, “গত বছর আগাম সবজিতে কিছুটা লাভ হয়েছিল। এবারও ভরসা করছি আগাম চাষেই। তবে খরচ বেড়েছে অনেক, সার ও বীজের দামও বেশি।” এবছর করলা ও বেগুন চাষ করেছি, টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে করলা ও বেগুন গাছ অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বকশীগঞ্জ কৃষি অফিস থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পাচ্ছি না। তারপরও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আগাম সবজি চাষে অধিক লাভবান হবে বলে জানান খোরশেদ মিয়া।
তবে কৃষি বিভাগ সতর্ক করে বলছে, আগাম চাষে ঝুঁকি বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ফসলহানি হতে পারে। আগাম উৎপাদনের কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে গেলে দামও পড়ে যেতে পারে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এবছর প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমি লক্ষমাত্রায় সবজি চাষ হবে বলে আশা করছি। প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে শীতকালীন সবজির বীজ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আগাম সবজি চাষে কৃষকদের সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে সবজির দাম কমে আসবে।
এ পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক, বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দরকার বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা, বাজার মনিটরিং এবং কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনুপাতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available