• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৬শে আশ্বিন ১৪৩২ রাত ১১:৪৮:৩০ (11-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

ডুমুরিয়ায় কবরস্থানের ওপর কাঁচাবাজার, স্থানীয়দের ক্ষোভ, প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন

ডুমুরিয়া-পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল এলাকায় পারিবারিক কবর স্থানের ওপর বসানো হয়েছে কাঁচামালের বাজার। এতে পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে ওই কবরস্থানের। যেখানে চির নিন্দ্রায় শুয়ে আছেন একাধিক মৃত ব্যক্তি। এমন ঘটনায় বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে এলাকার সাধারণ মানুষের!স্থানীয় সূত্র এবং সরেজমিনে জানা গেছে, অবহেলা ও প্রশাসনিক উদাসীনতায় চরম দুঃখজনক এক দৃশ্য এখন জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কবরের ওপর বসেছে পাইকারি কাঁচাবাজার-যেখানে মৃতদের চিরনিদ্রার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে ব্যাবসার কোলাহলে, বেচাকেনার আওয়াজে, আর জুতার শব্দে। কবরের ঠিক ওপরেই পচা সবজি ফেলা হচ্ছে, ঝুড়ি-ডালা রাখা হচ্ছে, রাখা হচ্ছে বাইসাইকেল এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতারা কবরের ওপর জুতা পায়ে চলাচল করছে দেদারসে।স্থানীয়দের অভিযোগ-এই অবমাননাকর দৃশ্য দিনের পর দিন চললেও প্রশাসন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আঠারোমাইল পাইকারি কাঁচাবাজারের জমির মালিক আব্দুল মজিদ ফকির কবরের কথা নিশ্চিত করে জানান, এখানে আমার পিতা এলাই বক্স ফকির ও মা গোলজান বেগম জামাল উদ্দিন শেখ ও খোরশেদ শেখ এর কবর রয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন এছাড়া এখানে আরও অসংখ্য কবর রয়েছে।স্থানীয় সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন-কোন বিবেকহীন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে কবরের পবিত্র জায়গায় বাজার বসানোর অনুমতি দেওয়া হলো? তারা বলেন, এই দৃশ্য শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, এটা মানবতার প্রতি চরম অবমাননা।সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সরকারি জায়গায় খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা পাইকারি কাঁচাবাজার ও আড়ৎ অবৈধভাবে দখল করেছিল কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় চলতি বছরের গত ১৩ এপ্রিল রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুর রহমানের নেতৃত্বে ওই জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।এ সময় উপস্থিত ছিলেন-সওজ খুলনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাগর মণ্ডল, নাজির কিরণ বালা, নায়েব জাহাঙ্গীর হোসেন, সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান ও সার্ভেয়ার সাদ্দাম হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।এর আগে, সরকারি জায়গা দখলমুক্ত ও সড়কের যানজট নিরসনে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। উচ্ছেদের সময় সীমানা পিলার ও কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা বেড়া স্থাপন করা হয়। যেন পুনরায় কেউ অবৈধভাবে জায়গা দখল করতে না পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সেই কাঁটাতার সরিয়ে আবারও সরকারি জায়গা দখল করে নিয়েছে।এর চেয়েও উদ্বেগজনক বিষয় হলো— উদ্ধারকৃত সরকারি জমির পেছনে গোর স্থানের অংশে বাজার বসানোর “অনুমতি” নিয়ে নিয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আর তাতেই কবরের পবিত্রতা ভঙ্গ হচ্ছে প্রতিদিন-জুতা পায়ে চলাচল, পচা সবজি ফেলা, এমনকি কবরের ওপরেই বেচাকেনা চলছে নির্দ্বিধায়।বিল্লাল হোসেন মোড়ল, বিএনপি নেতা শেখ হাফিজুর রহমান সেলিম, বিএনপি নেতা হযরত আলী জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয়রা বলছেন, এটা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটা মানবিক ও ধর্মীয় অবমাননা। তাদের দাবি-অবিলম্বে কবরের ওপর বসানো বাজার উচ্ছেদ করতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনকে মানবিক দায়িত্বে এগিয়ে এসে কবরের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে।স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে কবর রয়েছে, সেই জায়গায় কীভাবে বাজার স্থাপনের অনুমতি মিলল? প্রশাসনের কেউ কি বিষয়টি জানতেন না? পবিত্র স্থানের প্রতি এমন অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।এ ঘটনায় স্থানীয় আলেম সমাজের একাধিক ব্যক্তির মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, কবরের ওপর বা আশেপাশে বাজার বসানো ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত অশোভন ও অগ্রহণযোগ্য। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটছে, অথচ কেউ পদক্ষেপ নিচ্ছে না-এটা দুঃখজনক ও লজ্জার। কবরের পবিত্রতা রক্ষার দায় প্রশাসনের, কিন্তু তারা যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ধর্মীয় স্থানের মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে বাজার সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা না নিলে আমরা প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হব।এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, কাঁচা মালের পাইকারি বাজারের ভেতরে কবর থাকার বিষয়টি আমরা জেনেছি। কবরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে বলেও শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ঘটনা প্রসঙ্গে খুলনা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি সত্যিই এমন কিছু ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোভাবেই কবরের পবিত্রতা নষ্ট করতে দেয়া হবে না।