• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ২৯শে কার্তিক ১৪৩২ দুপুর ১২:৪৪:২৫ (13-Nov-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

‘নদীতে নামলেই মামলা–জাল পুড়ে ছাই, খামু কী বাঁচুম কেমনে’

মতলব উত্তর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীকেন্দ্রিক হাজারো জেলে পরিবার চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিদিনের মতো নদীতে মাছ ধরতে গেলেই জাল জব্দ, মামলা, এমনকি কারাদণ্ডের ভয়—এ যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। জাটকা সংরক্ষণের নামে প্রায় সারা বছরই চলে প্রশাসনের অভিযান, ফলে জীবিকার উৎস সেই নদীই এখন জেলেদের কাছে আতঙ্কের নাম।উপজেলার মোহনপুর, ষাটনল, এখলাসপুর, বাবুবাজার, আমিরাবাদ বাজার, জহিরাবাদ ও দশানীসহ বিভিন্ন জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। সংসারে আয় নেই, অথচ স্থানীয় এনজিও ও মহাজনের ঋণের কিস্তির চাপ বাড়ছে দিন দিন। অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তনের চিন্তাও করছেন।ষাটনল এলাকার জেলে রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নদীতে নামলেই নৌ পুলিশ, মৎস্য অফিস, কোস্টগার্ড সবাই এসে ধরে নেয়, জাল আগুনে পুড়ায়। আমাগো দোষ কী? মাছ ধরা ছাড়া তো কিছুই পারি না। এখন সংসার চালামু কেমনে?’বৃদ্ধ জেলে সাহেব আলী বলেন, ‘আগে নদীতে নামলে দিনে অনেক ইলিশ পাইতাম। এখন জাটকা ধরতে গেলেও ভয়। পুলিশ ধরলে মামলা দেয়। ঘরে চুলা জ্বলে না, বাচ্চারা না খাইয়া ঘুমায়।’বাবুবাজার জেলে পল্লীর টিটু বর্মন জানান, ‘আমাগো জীবিকা নদী, কিন্তু এখন নদীতে নামা মানে বিপদ। জাল নাই, ঋণের কিস্তিও দিতে পারতেছি না। অনেক জেলে এখন কামলা হইছে।’মোহনপুর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘একটা ছোট জাল কিনতে গেলে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। জাল জব্দ হইলে সব শেষ। এনজিও কিস্তির টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খাই।’একই গ্রামের কাইল্লা বেপারী আক্ষেপ করে বলেন, ‘জেলে না হইলে খামু কি? নদী তো আমাগো মা। কিন্তু এখন নদীও নিষেধ, জালও নিষেধ, মাছও নিষেধ!’মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জাটকা সংরক্ষণে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। জেলেরা যেন নিষিদ্ধ সময়ে মাছ না ধরে, সেজন্যই কঠোর নজরদারি চলছে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করা হয়।’মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, ‘চলতি বছরের ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলবে। এর আগে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়। এই সময় জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’তিনি আরও বলেন, “সরকার প্রতি বছর জেলেদের জন্য ভিজিএফ চাল বিতরণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়। তবে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’