বাগেরহাটে ঘুষ ছাড়াই পুলিশে নিয়োগ পেলেন ২০ তরুণ-তরুণী
বাগেরহাট প্রতিনিধি: মাত্র ১২০ টাকার আবেদন ফি দিয়েই ঘুষ ও তদবিরমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাগেরহাট জেলা পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন ২০ জন তরুণ-তরুণী।২৯ মে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাগেরহাট নতুন পুলিশ লাইন্স মাঠে আয়োজন করা হয় ফলাফল ঘোষণা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ নিয়োগপ্রাপ্তদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।পুলিশ ও পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সুযোগ পাওয়া তরুণ-তরুণীরা জানান, এই নিয়োগের প্রতিটি ধাপেই ছিল কঠোর যাচাই ও নিরপেক্ষতা । জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাও নিজেদের মেধা, শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সকল ধাপ। অনেকেরই ছিল চাকরিতে আবেদনের শেষ সুযোগ। কারো পিতা নাই, কেউ দিনমজুরের মেয়ে, কেউবা রিকশাচালকের ছেলে, কেউ চা বিক্রেতার ছেলে।পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সুযোগ পাওয়া তরুণী মোসা. তুলি বলেন, আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই জীবন কেটেছে অভাব-অনটনের মাঝে। বাবা পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। দুই বোনের মধ্যে আমি বড়। আমার পরিবার সব সময় আমাকে সাহস জুগিয়েছে। তাদের অনুপ্রেরণা আর নিজের চেষ্টা, এই দুইয়ে ভর করেই আজ পুলিশে সুযোগ পেলাম।চূড়ান্ত ফলাফলে নিজের নাম শুনে আবেগে কেঁদে ফেলেন কনস্টেবল পদে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ তরিকুল। তাঁর বাবা নদীতে মাছ ধরে তাদের সংসার চালান। তরিকুল বলেন, ‘বিশ্বাসই করতে পারছি না। ঘুষ ছাড়াই আমার চাকরি হলো!’বাগেরহাট পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা এবং আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এবার আমরা শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছি। কোনো ধরনের তদবির, ঘুষ বা সুপারিশ এখানে স্থান পায়নি। আমরা চাই যোগ্য, সৎ ও মেধাবীরাই পুলিশের সদস্য হোক। আজকের এই ফলাফল তারই প্রমাণ।তিনি আরও জানান, যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা যেন সৎ থেকে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেন, এটাই প্রত্যাশা।পুলিশ সদস্য নিয়োগে মাঠ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৯৯২ জন। তার মধ্যে লিখিত পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে ২৩৪ জন। ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মাত্র ২৬ জন তরুণ-তরুণী। উত্তীর্ণ হন ১৮ জন তরুণ ও ২ জন তরুণী। অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে আরও ৪ জনকে।পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।