• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:২৯:২৮ (11-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:২৯:২৮ (11-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

রৌমারীতে এলডিডিপি প্রকল্পে অর্থ হরিলুট

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সরকারি অর্থায়নে ছাগল ও ভেড়ার পরিবেশবান্ধব সেড নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। এলডিডিপি প্রকল্পের অর্থ হরিলুট, ছাগল ও মুরগির ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে কাজগুলো উপকারভোগীদের সম্পাদন করার জন্য ব্যাংক হিসাবে টাকা দেয়া হয়েছিল, সেই টাকা কৌশলে প্রকল্পের দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা উত্তোলন করে তিনি নিজেরাই সেড নির্মাণ করেন। কিন্তু নিম্নমানের কাজ করে এলডিডিপি প্রকল্পের অর্থ হরিলুট ও নানা অনিয়মে উপকারভোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।উপজেলা পর্যায়ে গঠিত প্রডিউসার গ্রুপে (পিজি) সদস্যদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্টের আওতায় ছাগল ও ভেড়ার পরিবেশবান্ধব সেড (ঘর) নির্মাণের জন্য এলডিডিপি অর্থ বছর ২০২২-২৩ এ বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০-২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হলেও ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খচর করে। বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম হাবিবুর রহমান ও প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদন্নবী মিলন।এর আগে উপকারভোগীদের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকে একাউন্ট খুলে দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। পরে একাউন্টে টাকা আসলে চেকে সই করে প্রাণিসম্পদ কর্মককর্তা ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে টাকাগুলো নেন। যেখানে উপকারভোগীরা এই টাকা দিয়ে তারা নিজেরাই কাজ করার কথা ছিল।প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ঘর নির্মাণের লক্ষ্যে পিজি সদস্যদের সঙ্গে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন ওই প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এমনকি স্ট্যাম্পের টাকাও উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। ঘরের সাইন বোর্ডের জন্য প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা নেওয়া হয়। প্রকৃত ব্যয়ের সঙ্গে এসব ঘর নির্মাণ খরচের হিসাব কিংবা নেই কোনো ভাউচার।উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর বামনেরচর ৩৬টি, জিগ্নীকান্দী ৩৩টি, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চরধনতল ২৮টি ও হরিণধরা গ্রামে ৩৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প এলডিডিপির সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল রৌমারী।প্রতিটি সেড নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৪টি ঘরের জন্য ২০ হাজার টাকা করে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। বাকি ৯৭টি ঘরের জন্য ২৫ হাজার করে ২৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এই দিয়ে মোট রৌমারী উপজেলায় ১৩১টি ঘরের জন্য সর্বমোট ৩১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। অ্যাকাউন্ট-পে এই চেকের টাকা মালিক ছাড়া প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষে উত্তোলন সম্ভব ছিল না। অথচ উপকারভোগী সদস্যদের কাছ থেকে চেক সই করে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা তার লোক দিয়ে এসব টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। পরে তিনি নিজেই ঠিকাদার সেজে এসব ঘরের কাজ করেন।ইসলামী ব্যাংক রৌমারী শাখায় পিজি সদস্যদের অ্যাকাউন্টে এ টাকা দেয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। সদস্যদের ম্যানেজ করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম হাবিবুর রহমান ও প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদুন্নবী মিলন কৌশলে টাকাগুলো নিজেদের আয়ত্তে নেন। প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী নিজেরা সেড তৈরি করে দেবেন এমন প্রতিশ্রুতিতে সদস্যদের টাকা দিতে বাধ্য করেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, তারা নিম্নমানের কাঠ, টিন, খাম দিয়ে কোনো মতে নির্মাণকাজ করে বুঝিয়ে দেন। কয়দিন যেতে না যেতেই এসব ঘর অকেজো হয়ে পড়ে। সেড ঘরের মেঝো পাকা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।রৌমারী সদর ইউনিয়নের চরবামনেরচর গ্রামের পিজি কমিটির সভাপতি ও সদস্য হোসনে আরা বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমাদের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে তারাই ব্যাংকে একাউন্ট খুলে দিয়ে টাকা আসলে চেকে সই করে টাকা উত্তোলন করেন। পরে যে ঘর নির্মাণ করে দেন তা একেবারেই নিম্নমানের। ঘরের পর্দা ও মশারী দেওয়ার কথা তারও কোনো খবর নেই।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ সম্পসারণ কর্মকর্তা মাহমুদন্নবী মিলন জানান, দেখাশোনার দ্বায়িত্বে ছিলাম, এর বেশি কিছু জানি না। আমাদের বড় স্যারের নির্দেশেনায় কাজ করেছি। তবে সেড নির্মাণের অনিয়মের বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তোর পাওয়া যায়নি।রৌমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, সদস্যদের দ্বায়িত্ব দিলে এসব ঘরের কাজ ভালো ভাবে হবে না তাই আমরা নিজেরাই করেছি। এলডিডিপি প্রকল্পের হরিলুট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভিন্ন কথা বলে জানান যে, কোনো কাজ একশত পার্সেন্ট হয় না। তিনি নিজেই ঠিকাদার সেজে কাজ করেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ভিন্ন কৌশলে পাশ কাটিয়ে যান।কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো মোনাক্কা আলীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সেড নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকলে লেখেন আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।