কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলালের নওটিকা কেশুরতা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের ২০ জন হতদরিদ্র শিক্ষার্থীর নামে প্রাপ্ত সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়নি বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক মহলে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পারফরমেন্স বেইজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশন (PBSSI) প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়টি ৫ লক্ষ টাকার একটি সরকারি অনুদান পায়। এর মধ্যে ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য আর ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয় ২০ জন হতদরিদ্র শিক্ষার্থীর জন্য। নিয়ম অনুযায়ী, এই অর্থ থেকে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে চেকের মাধ্যমে প্রদান করার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন, সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ও অফিস সহকারী উত্তম বাবু প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নামে চেক ইস্যু করে চেক বইয়ের পাতায় স্বাক্ষর নেন, পরে নিজেরাই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। শিক্ষার্থীদের হাতে ৫ হাজারের পরিবর্তে প্রতি জনকে দেওয়া হয় মাত্র ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। বাকি অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেনের কাছে অভিযোগ করলে তিনি উল্টো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন। এরপর রাতে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ও অফিস সহকারী উত্তম বাবু অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলেও জানান অভিভাবক স্বপ্না বালা।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সঙ্গিতা বালা বলেন, টাকা দেওয়ার সময় প্রধান শিক্ষক, ফরহাদ স্যার ও অফিস সহকারী উত্তম বাবু বলে দেয়, যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, বলবা ৫ হাজার টাকা পাইছো। আমি মিথ্যা কথা বলবো কেন? দিয়েছেন দেড় হাজার, আর বলবো পাঁচ হাজার! এটা কেমন বিচার? আমি আমার ন্যায্য ৫ হাজার টাকাই চাই। সে আরও জানায়, শুধু সে একা নয়, একই শ্রেণির সুমি খাতুন, রূপা ও তমাসহ অন্যান্য সহপাঠীরাও একইভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রত্না জানায়, তালিকায় নাম উঠেছে তা জানতামই না। অথচ, আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্টে পড়াশোনা করি। শুনেছি, যারা ফরহাদ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে, তারাই মূলত তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী শিক্ষক জানান, শুধু শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা নয়, ৪ লক্ষ টাকার উন্নয়ন বরাদ্দেও দুর্নীতি হয়েছে। প্রধান শিক্ষক, ফরহাদ হোসেন ও উত্তম বাবু সবকিছু নিজেদের মতো করে চালাচ্ছে। আমরা কেউ কিছু বললে চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে।
অফিস সহকারী উত্তম বাবু বলেন, আমি শুধু চেক লিখে দিয়েছি। কে টাকা তুলেছে, তা আমি জানি না। আমি কারও হাতে টাকা দিইনি।
সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন স্বীকার করে বলেন, আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনেছি এবং সবাইকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার কাছে প্রাইভেট পড়ে, তারা আমাকে প্রাইভেট ফি দিয়েছে। হয়ত তারা বাড়িতে বলে নাই যে প্রাইভেটের টাকা দিয়েছে, তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নামে পাঁচ হাজার টাকার আলাদা চেক দেওয়া হয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন কেন টাকা তুলেছেন, সেটা আমি জানি না। কয়েকজন অভিভাবক এসেছিলেন, শুনেছি, ফরহাদ হোসেন যেসব শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান, তাদের কাছ থেকে তিনি প্রাইভেট পড়ার টাকা নিয়েছেন। পরে তাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজের অর্থ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৪ লাখ টাকার কাজ এখনো শেষ হয়নি, কাজ শেষ হলে হিসাব পরিষ্কার হবে। আর এসব অভিযোগ প্রতিপক্ষের মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) কাজী মনোয়ারুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের নামে দেওয়া চেক শিক্ষকরা উত্তোলন করতে পারে না। এটা নিয়মবহির্ভূত। বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া একাডেমিক সুপারভাইজারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available