নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণের অভিযোগে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার অপর তিন আসামি হলেন—সেতু বিভাগের সাবেক সচিব ও নির্বাহী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (অবসরপ্রাপ্ত) কবির আহমদ এবং সাবেক পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আলীম উদ্দিন আহমেদ।
২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এ প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় তিনটি কাজ—পরিষেবা এলাকা, পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার এবং একটি ট্যাগ বোট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ উপেক্ষা করেই এসব কাজ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা সুপরিকল্পিতভাবে নিজেদের এবং অন্যদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে প্রকল্পে কল্পিত ও অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা অনুমোদন করান। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এবং অরুপ হংকং জেভি যৌথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা দাখিল করে। ২০১৫ সালে সিসিসিসি প্রস্তাবিত ৬৭৯ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের বিপরীতে ৬৪৬ মিলিয়ন ডলারে করা কথা জানায় সেতু বিভাগ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেখা যায়, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় উল্লিখিত ১০টি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়নি।
দুদক জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তার খুব কম অংশই পূরণ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুলাই (২০২৫) পর্যন্ত সময়ে কর্ণফুলী টানেল দিয়ে চলাচল করেছে মাত্র ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৯টি যানবাহন— যা সম্ভাব্যতার ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এ সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, অথচ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে সরকারের প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পে যুক্ত করা তিনটি কাজ— পরিষেবা এলাকা, পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার এবং ট্যাগ বোট— প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না এবং এসব বিষয়ে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কোনো সুপারিশ ছিল না।
বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি সুলিভান ও মাইকেল কান্টনার এবং আইইউটির অধ্যাপক ড. হোসেন মো. শাকিনও এ তিনটি কাজের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেননি।
অথচ এসব কাজ অন্তর্ভুক্ত করে অনুমোদন দেওয়া হয় সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে। এতে জনগণের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়।
দুদক আরও জানিয়েছে, আসামিরা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ), ২০০৬ এর বিধান লঙ্ঘন করে প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দেন। এতে ৫৫ লাখ ২১ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ঘোষণা দেন। কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর।
কিন্তু বাস্তবায়নের পর প্রকল্পের অর্থনৈতিক ফলাফল হতাশাজনক। বিপুল ব্যয়, কম রাজস্ব, ও কল্পিত লক্ষ্যমাত্রার ব্যর্থতায় প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available