• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ২৮শে আশ্বিন ১৪৩২ বিকাল ০৩:৪৪:১৭ (13-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

একটি ঘরের অভাবে কষ্টে আছেন রাহেলা বেগম

১৩ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮:০৮

সংবাদ ছবি

নাটোর প্রতিনিধি: ‘আমি মানুষের দুয়ারে চায়া খাইয়া প্যাট চালাই, আমার একটু ঘরের দাবি শুনা।’ চোখে জল নিয়ে এই কথাগুলোই বললেন ৭৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা রাহেলা বেগম। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার খন্দকার মালঞ্চি গ্রামের এক কোণায় থাকা এক নিঃস্ব নারী। যাকে গ্রামের মানুষ একসময় স্নেহভরে ডাকতেন ‘রাহেলা সুন্দরী’ নামে।

একসময় তার শ্বশুরবাড়ির শত বিঘা জমি ছিল। ছিল ধান-চালের ভাঁড়ার, গোয়ালে গরু। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ রাহেলার নামে এক শতক জমিও নেই।

Ad
Ad

স্বামী আক্কাস আলী মারা গেছেন বহু বছর আগে। সন্তানেরা বড় হলেও ভাগ্য বদলায়নি রাহেলার। তিন সন্তানের মধ্যে এক ছেলে মারা গেছে প্রায় ১৫ বছর আগে। মেয়েটি বিবাহিত, আর একমাত্র জীবিত ছেলের সংসারেও অভাব-অনটন। প্রথমে ছেলের ঘরেই থাকতেন। কিন্তু সেই জমি ছেলের স্ত্রীর নামে থাকায় একসময় ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। ভিটেহীন হয়ে পড়েন তিনি।

Ad

জমি কেনার ক্ষমতা না থাকায় হানিফুর রহমান গেন্দা তার বাগানের জমির এক কোণায় রাহেলাকে থাকার অনুমতি দেন। সেই জমিতে পাটখড়ি, ছেঁড়া টিন আর বাঁশ দিয়ে একটি ছোট ছাপড়া ঘর তুলে নেন তিনি। ঘরটির অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে সামান্য বৃষ্টি হলেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকে। পাটখড়ির বেড়া আর সেসবের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে বাতাস।

ঘরের এক কোণে কাঁচা টয়লেট, আর বারান্দার পাশে মাটির চুলা। পানির জন্যও পাশের বাড়িগুলোর মুখাপেক্ষী তিনি। আশপাশে বিদ্যুৎ থাকলেও তার ঘরে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো।

রাহেলার বাবার বাড়ি একই উপজেলার নূরপুর মালঞ্চি গ্রামে। বাবার ওয়ারিশ হিসেবে রেখে যাওয়া দুই বিঘা জমির ওপর তার দাবি ছিলো। কিন্তু সেই জমিও এখন অন্যের দখলে। আবার স্বামী নিরক্ষর হওয়ায় তার পৈত্রিক সম্পত্তিও ঠিকভাবে বুঝে নিতে পারেননি। এখনও অনেক জমি অন্যরা দখল করে খায় বলে দাবি করেন তিনি।

‘আমার জমি লিয়া ওরা হরিলুট করি খায়। আর আমি মাইনষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতি।’ এই কথা বলার সময় রাহেলার কণ্ঠে ছিলো না প্রতিবাদের ঝাঁঝ, ছিলো শুধু হতাশা আর ক্লান্তি! প্রতিমাসে মাত্র ৫০০ টাকা বিধবা ভাতা পান তিনি। বাকিটা চলে মানুষের দয়ার ওপর। সকাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সাহায্য চেয়ে চাল, ডাল সংগ্রহ করেন। কখনো অন্যের বাড়িতে খান, আবার কখনো অর্ধাহারে অনাহারেই দিন কাটান।

প্রতিবেশী রেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘রাহেলা একজন অসহায় মানুষ। প্রতিদিনই কারো না কারো বাড়ি যান সহযোগিতার জন্য। এমন অবস্থায় কেউ যেন না পড়ে।’

গ্রামের সমাজ প্রধান রেজাউল করিম বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে রাহেলা বেগম খুব কষ্টে আছেন। সরকারি সহায়তা পেলে হয়তো তার জীবনটা একটু স্বস্তির হতো।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমরান আলী বলেন, ‘উনি বিধবা ভাতা পান, কিন্তু কষ্টে দিন যায়। সরকারি সুযোগ খুব সীমিত, তবুও তার জন্য কিছু করা যায় কি না চেষ্টা করব।’

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ










সংবাদ ছবি
একটি ঘরের অভাবে কষ্টে আছেন রাহেলা বেগম
১৩ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮:০৮


Follow Us