বুটেক্স প্রতিনিধি: বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ক্যাম্পাসে আশঙ্কাজনকভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে। রাতের আঁধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, হল, হলের ছাদ, কক্ষ ও নির্জন স্থানে নিয়মিতভাবে বিদেশি মদ, হুইস্কি, ভাং ও গাঁজার আসর বসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না, বরং দিন দিন তা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
জানা যায়, মাদকের এ নেটওয়ার্কে ৪৫ ও ৪৬ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়াও চলমান ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত শিক্ষার্থীও জড়িত। বিশেষত ৪৮তম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ নেটওয়ার্কের সদস্যরা নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসের ইএসই কর্নারের পাশে বসে মাদক সেবন করে থাকে। এতে তিন হলের মাদকসেবীকে শিক্ষার্থী, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী এবং সাবেক শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ফেস্টে এ নেটওয়ার্কের অন্তত ১০-১৫ জন সদস্য জি.এম.এ.জি ওসমানী হলের ছাদে মদের আসর বসায়। পরে তাদের সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের অনুষ্ঠানে মাতাল নৃত্য করতে দেখা যায়। এসময় সরেজমিনে ছাদে গিয়ে দুই বোতল কেরু কোম্পানির মদ, গাঁজার উচ্ছিষ্টাংশ ও সিগারেট পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল জি.এম.এ.জি ওসমানী হল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও শহীদ আজিজ হলে মাদকসেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওসমানী হলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে ছাদ ও কয়েকটি কক্ষে নিয়মিত মাদকসেবনের অভিযোগ রয়েছে। নজরুল হলে ৩য় ও ৫ম তলা ও ছাদের নির্দিষ্ট অংশে গাঁজার আসর বসে, যদিও গত বছর অভিযান চালিয়ে কিছু রুম সিলগালা করা হয়েছিল। আজিজ হলেও ছাদ ও কয়েকটি কক্ষে নিয়মিত গাঁজার আসর বসে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাবেক শিক্ষার্থীও অংশ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জি.এম.এ.জি ওসমানী হলের প্রভোস্ট ড. মো. সাইদুজ্জামান কিছুদিন আগে বিভিন্ন রুমে অভিযান চালিয়ে সতর্কতা নোটিশ দেন এবং একজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেন। তবে এসব উদ্যোগে নেওয়ার পরও কিছু শিক্ষার্থী মাদক সেবন করে যাচ্ছে।
অভিযোগ আছে, ক্যাম্পাসে কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আড়ালেও মাদকসেবন চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, অডিটোরিয়ামে বিশেষ করে কনসার্ট চলাকালে গাঁজা সেবনের প্রবণতা দেখা যায়। তার অভিযোগ, ছাত্রলীগের কিছু সিনিয়র নেতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই এই নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে বিশেষত ৪৭ ও ৪৮ ব্যাচে মাদকের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় ইএসই কর্নার, কটন প্রসেসিং ল্যাব ও ডাইস ল্যাবের পাশে শিক্ষার্থীরা গাঁজা ও মদ পান করছে। এমনকি ৪৯তম ব্যাচের একটি বিভাগের অডিটোরিয়ামে ওরিয়েন্টেশনের সময় সংসদ ভবনের টেবিলে গাঁজার উচ্ছিষ্টাংশ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, যদি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হয়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে।
মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, হল প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে দ্রত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি সেকশনের সাথে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসের সব জায়গায় নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত আসর বসছে হলে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত কঠোর নজরদারি ও দমনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বুটেক্সকে মাদকমুক্ত করা এবং ডোপ টেস্ট চালু করার ব্যবস্থা করা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available