ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বেলওয়া গ্রামের ছাতনি পাড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে ৯০ বছর বয়সি আদিবাসী বৃদ্ধা ফুলমণি মুর্মু। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর আর অনিশ্চিত আগামীর ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। সন্তান থাকা সত্ত্বেও অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে তার দিন। সরকার থেকে পাওয়া সামান্য বয়স্ক ভাতা তার জীবনের ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না।

ফুলমণি মুর্মু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে কেউ দেখাশুনা করে না। নাতি একটু কাজকর্ম করে যেটুকু খরচ করে নিয়ে আসে, তা দিয়েই আমি অনেক কষ্ট করে রান্না করে খাই।’


ফুলমণি মুর্মুর জীবনের শেষ সম্বল এখন তার ১১-১২ বছর বয়সি নাতি স্যামুয়েল হেমব্রম। যে বয়সে স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকার কথা, সেই বয়সেই জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টুকটাক কাজ করা আর গরু-ছাগল চরিয়ে যে সামান্য আয় করে, তা দিয়েই চলে দাদি-নাতির দিন।
স্থানীয় বাসিন্দা ছোট মুর্মু জানান, প্রায় ১৬ বছর আগে ফুলমণি মুর্মুর স্বামী তরু হেমব্রম মারা যান। এরপর থেকেই জীবনের কঠিন সংগ্রাম শুরু হয় তার। চার ছেলে ও দুই মেয়ের সংসারে এক সময় মুখরতা থাকলেও আজ সেই ঘর নিঃস্ব। কিছুদিন আগে এক ছেলে মারা গেলে আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে জীবিত তিন ছেলে ও দুই মেয়ে থাকলেও কেউই বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ নেন না। মৃত ছেলের একমাত্র সন্তান স্যামুয়েলকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন ফুলমণি মুর্মু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বসতঘরটি দারিদ্র্যের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের টিনে মরিচা ধরে একাধিক স্থানে ভেঙে পড়েছে, মাটির দেয়াল ক্ষয়ে গেছে। বৃষ্টি নামলেই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে পানি। মেরামত করার মতো কোনো আর্থিক সামর্থ্য নেই তার। ঘরের বারান্দায় একটি পুরোনো চৌকি পেতে নাতিকে নিয়ে কোনো রকমে রাত যাপন করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বর্তমানে সরকারি বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত থাকায় বিধি অনুযায়ী তাকে অন্য কোনো ভাতার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করা হবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবানা তানজিন বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এটা অত্যন্ত মানবিক ও দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available