লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বৃদ্ধি, চরাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে হঠাৎ করেই তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে বাদাম, ভুট্টা, পাট ও ধানের মাঠ। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এলাকার কৃষকেরা।পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় অনেক জমির ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হলেও তা ঘরে তোলার আগেই প্লাবিত হয়ে যায়। এতে করে সবজি ও শস্যঘরে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষকেরা। তারা এখন নৌকা ও অন্যান্য উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে ফসল উদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।জেলার বিভিন্ন এলাকায় একই অবস্থা দেখা গেছে। নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কোথাও কোথাও পাট, ভুট্টা, ও বাদাম তলিয়ে যাওয়ায় গাছ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক পরিবারগুলো। বীজ, সার ও জমি চাষে নেওয়া ঋণ মেটানো তো দূরের কথা, অনেকে তাদের শেষ সম্বল ফসলটুকুও রক্ষা করতে পারছেন না। এখনই সরকারিভাবে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করা না হলে এই এলাকার কৃষকদের পুনরুদ্ধার দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।মহিষখোচার গোবর্ধন এলাকার কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমার দুই একর জমিতে ভুট্টা ছিল। কাটার সময় হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ পানি এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন আর কিছুই করার নাই। নৌকা দিয়ে যা পারি তুলে নিচ্ছি।আরেক কৃষক হাসান আলী বলেন, আর ১৫/২০ দিন সময় পেলেই বেশিরভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। হঠাৎ করে বন্যায় তাই বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছি। শেষ সময়ে এসে পানি পাইলে ফসল নস্ট হয়ে যাবে।লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, “ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। এ বছর বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা পরবর্তীতে ক্ষতি নিরুপণ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। বোর্ডের লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, শুষ্ক মৌসুমে যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছিল, সেখানে প্রতিরক্ষা কাজ আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। জরুরি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী তিনদিন তিস্তায় পানি কিছুটা বাড়ন্ত থাকতে পারে।”