• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ৫ই ভাদ্র ১৪৩২ রাত ০৯:০৮:০৮ (20-Aug-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

নোবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্ক

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা এবং ইউজিসির নির্দেশনা অনুসারে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় ড. মো. ছফিউল্লাহকে আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ড. মো: ছফিউল্লাহ ১৯৯৮ সালে দাখিল (প্রথম) এবং ২০০১ সালে এইচএসসি (প্রথম) পাশ করেন। ২০০৭ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে এল.এল.বি (৫৬.৬০% মার্কস) এবং ২০০৯ সালে এল.এল.এম (৩.৫৮ সিজিপিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। ৯ মার্চ ২০২৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ১৫ বছরের শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে যেখানে লেকচারার পদে ৪ বছর ৩ মাস, সিনিয়র লেকচারার পদে ৫ বছর ১ মাস এবং পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছর ৪ মাস কর্মরত ছিলেন।তবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপককে ‘সিনিয়র লেকচারার’ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ইউজিসি নিয়োগ নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা এবং ইউজিসির নির্দেশনা মেনেই আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু ড. মো: ছফিউল্লাহ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর আইন বিভাগের পাঁচ বছরের বেশি সহকারী অধ্যাপক পদে অভিজ্ঞতা আছে এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০০০-এর মধ্যে থাকায় সেখানে প্রাপ্ত শিক্ষকতা অভিজ্ঞতাকে শতভাগ গণ্য করা হয়েছে। ইউজিসির নীতিমালা অনুসারে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে অভিজ্ঞতা থাকলে তা সম্পূর্ণভাবে বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া সিনিয়র লেকচারার পদকে সহকারী অধ্যাপক পদে গণনার করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য হচ্ছে এ বিষয়ে নিয়োগের পূর্বেই বিশেষজ্ঞ এবং আইনবিদেরও আইনি মতামতও নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।এছাড়াও ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪ (৫ এর মধ্যে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে (৪ এর মধ্যে)। তবে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণকারী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে ৫৫% মার্কস যুক্ত করেছেন, এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেন, ইউজেসির নীতিমালা অনুযায়ী পিএইচডি ডিগ্রি ক্ষেত্রে এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত যেকোনো একটিতে দ্বিতীয় বিভাগ শিথিল যোগ্য হতে পারে। আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও বারবার সংশোধন আনায় নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বলেন, এই সংশোধনী শুধুমাত্র কোন এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে নয় সকল প্রার্থীর জন্যই প্রযোজ্য ছিল।এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. একরামুল হক বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও পদোন্নয়ন নীতিমালায় ‘সিনিয়র লেকচারার’ নামে কোনো স্বতন্ত্র পদ নেই। তবে, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সিনিয়র লেকচারার’ পদটি প্রচলিত এবং এই পদের শিক্ষকগণ সাধারণত শিক্ষাদান, গবেষণা এবং একাডেমিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপকের সমমানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ফলে, বিশেষত যদি শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়ে থাকে তাহলে সে অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিযুক্ত।বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন বাবু বলেন, সিনিয়র লেকচারার পদটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোয় না থাকলেও অনেক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদে কর্মরত শিক্ষকরা সহকারী অধ্যাপকের সমপর্যায়ের একাডেমিক ও গবেষণা কাজ পরিচালনা করে থাকেন। পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অভিজ্ঞতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০০০-এর মধ্যে থাকা কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তাহলে সেই অভিজ্ঞতাকে শতভাগ হিসেবে গৃহীত হওয়া একেবারেই যুক্তিসঙ্গত এবং নীতিনির্ভর।নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের একাডেমিক ফলাফল নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত নীতিমালা অনুসরণের কথা জানিয়েছেন নোবিপ্রবি উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজুয়ানুল হক। তিনি বলেন, সকল নিয়মকানুন মেনেই আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল প্রশাসনকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম এবং খ্যাতী নষ্ট করতে এমন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রার্থীর পিএইচডি থাকলে যে কোনো একটি রেজাল্ট শিথিলযোগ্য। যা আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ২৫ নং ধারাতে স্পষ্টত উল্লেখ ছিলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এই নীতি অনুসরণ করে থাকে। তাছাড়া সম্প্রতি রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তাদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতাকে কোন ধরনের ব্যবধান ছাড়াই নিয়োগ প্রদান করে। ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা গণনা করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের স্পষ্ট বিধি নিষেধ নেই।সিনিয়র লেকচারারকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) বলেন, শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির সর্বশেষ ২০২১ সালের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের নীতিমালার ৫ ধারার স্পষ্ট নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য সহকারী অধ্যাপক পদে ৭ বছরসহ মোট ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, কিন্তু প্রার্থীর পিএইচডি থাকলে সহকারী অধ্যাপক পদে ৪ বছরসহ মোট ৭ বছরের সক্রিয় অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের সহকারী অধ্যাপক পদে ৫ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাহলে সেক্ষেত্রে সিনিয়র লেকচারারের বিতর্কের আর কোনো সুযোগ নেই।