• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২ সকাল ১০:১৪:০১ (19-Aug-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

কৃষকলীগ নেতার নামে কলেজ, পরিবর্তন চান স্থানীয়রা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পর পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাবেক গাড়াতী ছিটমহল এলাকায় গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি হলো ‘মফিজার রহমান কলেজ’। কলেজটির নামকরণ নিয়ে শুরু থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও এবার নাম পরিবর্তনের দাবি জোরালো হয়েছে।সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল ঘেঁষা গ্রাম ইয়ারপাড়ার বাসিন্দা মফিজার রহমান। তিনি স্থানীয়ভাবে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি নন। বরং তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণা আর দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। এমন এক ব্যক্তির নামে কলেজের নামকরণ স্থানীয়রা মানতে পারেননি শুরু থেকেই। এতদিন নানা কারণে মুখ খুলতে না পারলেও এখন তারা কলেজটির নাম পরিবর্তন চান।সম্প্রতি কলেজটির নাম পরিবর্তনের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন হাফিজাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন।জানা গেছে, মফিজার রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সর্বশেষ উপজেলা কৃষকলীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বড় ভাই প্রয়াত মখলেছার রহমান ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই মূলত নিজের নামে কলেজটির নামকরণ করেন মফিজার রহমান। পাশাপাশি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত করেন নিজের নাম।জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মফিজার রহমান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শুধু কলেজের নাম আর প্রতিষ্ঠাতার পদই বাগিয়ে নেননি; তিনি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতি করেছেন। এসব নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো।অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের পর পঞ্চগড়ের এই ছিটমহলটির নাম দেয়া হয় রাজমহল। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির জন্য বিলুপ্ত এই ছিটমহলে শুরু হয় উন্নয়ন। ইতোপূর্বে ছিটমহলের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন মফিজার রহমান। পরে ছিটমহল আন্দোলনের নেতৃত্বে গিয়ে রাতারাতি বদলে গেছে তার জীবন চিত্র। রাজমহলের উন্নয়নের সাথে সাথে উন্নত হয় মফিজারের জীবন মানও। যেই মফিজার পুরনো বাইসাইকেলে চলতেন, সেই মফিজার চলেন মোটরসাইকেলে, টিন শেড বাড়ি বদলে হয় বড় দালান। বিলুপ্ত এই ছিটমহলে শুরু হয় তার রাজত্ব। যার ইতি ঘটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে।স্থানীয়রা জানান, ছিটমহল বিনিময়ের পরপরই রাজমহলে স্থাপন করা হয় একটি আলীম মাদ্রাসা, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি প্রতিবন্ধী স্কুল ও একটি কলেজ। ক্ষমতাবলে চারটি প্রতিষ্ঠানেরই সভাপতি পদ দখল করে মফিজার করেছেন কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য। আলীম মাদ্রাসায় নিজের ভাইকে বসিয়েছেন অধ্যক্ষের চেয়ারে। সেখানেও চাকরির জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে। এছাড়া ছিটমহল আন্দোলনে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর আশ্বাস দিয়ে রাজমহলবাসীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। অনেকেই  ছিটমহল আন্দোলনে নিজের সক্রিয় ভূমিকা আর বড় ভাই তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মখলেছার রহমানের ছত্রছায়ায় পঞ্চগড় ও নীলফামারী অঞ্চলের ছিটমহল বিনিময় কমিটির সভাপতি পদও দখল করেন তিনি।স্থানীয় মমিনুল ইসলাম বলেন, মফিজার রাজমহলবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিলুপ্ত ছিটমহলকে ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তার চতুর্মুখী দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছিলো রাজমহলের বাসিন্দারা। আমি নিজেও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছি। সবখানে অর্থ আর রাজনৈতিক প্রভাবে পার পেয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগের পতনের পর তারও প্রভাব নেই, কিন্তু তার নামে কলেজটি রয়েছে। আমরা এই নাম পরিবর্তনের দাবি জানাই।ঢাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করেন ওয়ালিউল্লাহ ফারুক। তার গ্রামের বাড়ি কলেজটির পাশেই। তিনি বলেন, কলেজের জায়গাটা ছিলো আমার বাবা পিএম শাহাবুদ্দীনের। কলেজটি যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন কলেজের নাম আমার বাবার নামে করা হবে- এমন প্রলোভন দেখিয়ে নামমাত্র দামে জমি নিয়েছে মফিজার। কিছু জমি অন্যখানে বদলও দিয়েছে। মফিজারের প্রলোভনে পড়ে কলেজটি দাঁড় করাতে পরিশ্রম, সহযোগিতা- সবই করেছেন আমার বাবা। কিন্তু কলেজের নাম কিংবা প্রতিষ্ঠাতা- কোথাও আমার বাবাকে রাখা হয়নি। মফিজার আমার বাবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এমন প্রতারকের নামে কলেজের নাম থাকতে পারে না।হাফিজাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন বলেন, মফিজার রহমান এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন যে তার নামে কলেজ হতে হবে। তিনি প্রতারক, দুর্নীতিবাজ এবং রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম থাকা উচিত নয়। স্থানীয় এলাকাবাসী কলেজটির নাম পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি তুলছেন। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, এই কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘গাড়াতী ডিগ্রি কলেজ’ রাখা হোক।কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবি প্রসঙ্গে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, কলেজের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে নীতিমালা দেখতে হবে।