পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি: বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত জনপ্রিয় হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র এখন অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতিতে জৌলুস হারাতে বসেছে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী-সমুদ্রের মোহনা আর চিত্রল হরিণের চলাফেরা একসময় যেভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করত, বর্তমানে তা আর দেখা যাচ্ছে না। নিরাপত্তাহীনতা, ভেঙে পড়া অবকাঠামো এবং পর্যটন সুবিধার ঘাটতির কারণে দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

হরিণঘাটা বনাঞ্চলে একসময় পর্যটন উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল পাঁচতলা ওয়াচ টাওয়ার, এক কিলোমিটার দীর্ঘ কাঠের ফুট ট্রেইল, বিশ্রামাগার, পাকা সেতু, বেঞ্চ ও গণশৌচাগার। পরে কাঠের ট্রেইল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সিমেন্টের পাটাতন দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে এসব অবকাঠামোর অধিকাংশই ভেঙে পড়েছে।


সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দীর্ঘ ফুট ট্রেইলের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে যাওয়ায় পর্যটকরা বনের ভেতর দিয়ে লালদিয়ার চরে যেতে পারছেন না। ওয়াচ টাওয়ারের সিঁড়ি ও পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিশ্রামাগারগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পরিচ্ছন্ন ও পর্যাপ্ত ওয়াশরুম না থাকায় বিশেষ করে নারী পর্যটকরা সমস্যায় পড়ছেন।
পর্যটক মো. রাব্বি বলেন, ‘এতো সুন্দর একটি প্রাকৃতিক স্থান শুধুমাত্র পরিকল্পনার অভাবে পর্যটক টানতে পারছে না। নিরাপত্তা নেই, ওয়াচ টাওয়ার ও ব্রিজের অবস্থা ভয়াবহ। দ্রুত সংস্কার না হলে এই পর্যটন কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
আরেক দর্শনার্থী মো. সবুজ বলেন, ‘বনের ভেতরে হাঁটার পথটি এত ভাঙাচোরা যে বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটাই বিপজ্জনক। বিশ্রামাগারগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়। ন্যূনতম ওয়াশরুম সুবিধাও নেই, এভাবে কীভাবে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরবে?
সুন্দরবনের পর দেশের অন্যতম প্রধান ম্যানগ্রোভ বনভূমি হরিণঘাটা। এখানে একই সঙ্গে বন, নদী এবং বঙ্গোপসাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি উদ্যোগ থাকলে হরিণঘাটা কুয়াকাটার মতোই জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারত, যা পাথরঘাটার অর্থনীতির জন্য বড় অবদান রাখত।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার থেকে সেতু পর্যন্ত সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ ৩ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া লালদিয়ায় উন্নয়ন কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘বন বিভাগের জনবল সংকটের কারণে নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশের একটি টহল টিম থাকা জরুরি। কারও দ্বারা পর্যটক উত্ত্যক্তের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্ভাবনাময় হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় দেশের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রগুলোর তালিকা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে এই অনন্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available