নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২১ নভেম্বর যে ভূমিকম্পটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত হয়েছিল, সেটিকে গত দুই দশকের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেমন্ট–ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরি।

রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার এই কম্পনে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বহু ভবন ও স্থাপনায় ফাটল দেখা দেয় এবং ঢাকাসহ তিন জেলায় প্রাণহানি ও শতাধিক মানুষ আহত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভূমিকম্পের প্রকৃত ঝুঁকি রাজধানী অঞ্চলে আরও গভীরভাবে বিদ্যমান।


ভূতাত্ত্বিকদের আশঙ্কা, ঢাকার অদূরে মধুপুর ফল্ট জোনে যদি ৭ মাত্রার বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটে, তবে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে ভূমিকম্পে রাজধানীর কিছু এলাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
রাজধানীর যেসব এলাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ:
ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকার মাটি শত শত বছরের পুরনো। তাই মাটির গঠনের কারণে এসব এলাকার ভূমিকম্পের সহ্য ক্ষমতা বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার রমনা, পল্টন, মগবাজার, নিউমার্কেট, লালমাটিয়া, কোতয়ালি, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল, ধানমন্ডি, শের-ই বাংলা নগর, মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, পল্লবী, শাহ-আলী, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, গুলশান ও তেজগাঁও থানা এলাকাসহ বেশ কিছু পুরনো মাটির এলাকায়। বড় ভূমিকম্পেও এসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরান ঢাকার মাটি তুলনামূলক শক্ত হলেও সেখানে বিপদ। এখানে অনেক ভবনই অত্যন্ত পুরোনো এবং কাঠামোগতভাবে দুর্বল, ফলে বড় কম্পনে সেগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর জানান ঢাকা শহরের ভেতরে ৮–৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটার মতো বড় ফল্টলাইন নেই। কিন্তু মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের জন্য যথেষ্ট সক্রিয় ফল্ট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কম্পন হলে ঢাকার নতুন ভরাট করা অঞ্চলে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। হতাহতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং শহরের ভূপ্রকৃতিই বদলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল মনে করেন, ঢাকার চারপাশের জলাভূমি রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা হলেও বাস্তবে সেই এলাকাগুলোই সবচেয়ে বেশি দখল ও ভরাটের শিকার। তার মতে, বড় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হবে ঠিক ওইসব এলাকায় যেখানে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে হাজার হাজার স্থাপনা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের জন্য প্রকৃতির চেয়ে মানুষের অব্যবস্থাপনাই বেশি দায়ী হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available