কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: কেরানীগঞ্জের জিনজিরার একটি ফ্ল্যাট বাসায় পুড়িয়ে দেওয়া মরদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত নারী সালমার (৪৫) বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায়। তিনি ঢাকায় মুহুরির (উকিলের সহকারী) কাজ করতেন।

২৭ নভেম্বর বিকেলে ফ্ল্যাট থেকে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া অবস্থায় সালমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে।


প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ঘরে অগ্নিকাণ্ড হয়ে মারা গেছেন সালমা; কিন্তু একটি সিসিটিভি ফুটেজ ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পাশাপাশি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনাটি উঠে আসে।
এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামির নামে মামলা করেন নিহতের ভাই।
পুলিশের একটি টিম তদন্ত শুরু করে। নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি ভবনটির সামনে থাকা একটি দোকানের বাইরে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর টানা ৪ দিন আসামিকে ধরতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চলে অভিযান।
অভিযানে অংশ নেওয়া কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, আসামি ঘন ঘন তার অবস্থান পরিবর্তন করছিল। টানা ৪ দিন তাকে অনুসরণ করে রোববার ভোরে সুনামগঞ্জের একটি হাওর এলাকা থেকে রিয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার দুপুরে তাকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রিয়াজ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এসআই মিজানুর রহমান জানান, ঘাতকের ভাষ্য অনুযায়ী ‘ইগো প্রবলেম’ থেকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। প্রথমে ভিকটিমকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে (ধর্ষণ) লিপ্ত হয় রিয়াজ। দুই দিন পর গন্ধ ছড়াতে থাকলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘর তালাবদ্ধ করে সে পালিয়ে যায়।
জানা যায়, জিনজিরার অমৃতপুর এলাকায় তৃতীয়তলা ভবনের ২য় তলার ওই ফ্ল্যাটটি সালমা (ভিকটিম) ও তার বোন শামসুন্নাহার মর্টগেজ নিয়ে বসবাস করতেন। দুই রুমের ফ্ল্যাটের একটি রুম তিনি ঘাতক রিয়াজের কাছে সাবলেটে ভাড়া দিয়েছেন। রিয়াজ ও তার বাবা সাবলেট নেওয়া রুমে থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর এলাকায়। রিয়াজ পাশের একটি স্টিলের দোকানে কাজ করতেন আর তার বাবা ভ্যানগাড়ি চালাতেন।
২৫ নভেম্বর সকালে রিয়াজের বাবা ভুল করে পানির কল ছেড়ে কাজে চলে যান। এতে পানি পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সালমা মোবাইলে রিয়াজের সঙ্গে তর্কবির্তকে জড়িয়ে পড়েন। রিয়াজের বাবাকে বাজে মন্তব্য করেন সালমা। দুপুরে রিয়াজ বাসায় ফিরলে তাকে দেখে বিষয়টি নিয়ে আবারও হাঙ্গামা করেন সালমা। একপর্যায়ে পেছন থেকে গলাটিপে তাকে হত্যা করে রিয়াজ। পরে ধর্ষণ করে নিজের রুমে চলে যায়। পাশের ঘরে এভাবেই মরদেহ পড়েছিল। কেউ জানতে পারেনি। সালমার বোন গিয়েছিল গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে।
দুই দিন পর মরদেহ থেকে গন্ধ ছড়ালে রিয়াজ ২৭ নভেম্বর দুপুর পৌনে ৩টার দিকে যে ঘরে মরদেহ পড়ে আছে সেই ঘরটিতে আগুন ধরিয়ে ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ করে সুনামগঞ্জে পালিয়ে যায়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available