স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস এলাকার নয়নপুর ঈদগাহ মাঠে আবারও শুরু হয়েছে ‘বৃক্ষ ও কুটির শিল্প মেলা’র নামে লটারি ব্যাবসা। এই মেলার অনুমতি না থাকায় এর আগেও জেলা পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের নীরবতায় লটারির টাকা কোথায় যাচ্ছে তাহলে।
এর আগেও প্রথম দফায় সংবাদ প্রকাশের পর জেলা পুলিশ মেলাটি বন্ধ করে দেয়। তবে আশ্চর্যের বিষয়, কিছুদিন বিরতির পর আবারও একই মঞ্চ, একই আয়োজকদের অধীনে মেলাটি শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ মেলাটি বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রথমে কয়েকদিন কেবল স্টল ও প্রদর্শনী চালিয়ে জনমনে স্বাভাবিকতা আনলেও পরে আবারও র্যাফেল ড্রয়ের নামে লটারির প্রতারণা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হলেও পুরস্কার বিতরণ হয় অল্প, বাকি অর্থ চলে যাচ্ছে মেলার আয়োজক, স্থানীয় প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন লোকের পকেটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শত শত লটারি টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে। অথচ সরকারিভাবে অনুমতি না নেওয়ায় এই বিপুল পরিমাণ টাকা কোনো রাজস্ব হিসাবেই জমা হচ্ছে না।
স্থানীয়দের প্রশ্ন- প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরও কীভাবে পুনরায় এমন কার্যক্রম চালু করা সম্ভব? কারা এই মেলার পৃষ্ঠপোষক? কোন অদৃশ্য ক্ষমতার বলে মেলা বন্ধ করে দেওয়ার পর পুনরায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সেনানিবাস এলাকার মতো সংবেদনশীল স্থানে এত বড় মেলা কীভাবে সম্ভব?
এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, মেলা বন্ধ হওয়ার পর ভেবেছিলাম প্রশাসন এবার কঠোর হবে। কিন্তু এক সপ্তাহও যায়নি, আবার পুরোনো কায়দায় শুরু হয়ে গেল। মনে হয় কারও না কারও ছায়া-সমর্থন না থাকলে এটা সম্ভব নয়।
রশিদ মিয়া বলেন, এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারি বিক্রি হচ্ছে, অথচ প্রশাসনের কেউ কিছু বলছে না। তাহলে প্রশ্ন আসে-এই টাকার ভাগ কারা পাচ্ছে?
প্রশাসনিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মেলার আয়োজকরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন কিংবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড-কোনো জায়গা থেকেই আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেয়নি।
গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজ্জাত হোসেন জানান, উপজেলার পক্ষ থেকে কোথাও কোনো মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোন অনুমোদন দিয়েছে কিনা সেটার খোঁজখবর নিচ্ছি। যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি তাই আমরা খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তীতে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা আরেফীন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে কেউ যদি কোনো মেলা চালায় তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, যেখানে মেলা হচ্ছে সে এরিয়াটা আমাদের ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এরিয়ার বাহিরে। এখানে আমাদের অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরেও বিষয়টি আমি পুলিশকে অবগত করে দিচ্ছি।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, “মেলার জন্য আমাদের কাছে কোনো আবেদন করা হয়নি, তাই কোনো অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। যদি কোনো অবৈধ মেলা পরিচালিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সচেতন মহল বলছে, একবার বন্ধ হওয়ার পরও যদি একই জায়গায় আবার মেলা চালু হয়, তাহলে সেটি শুধু উদ্যোক্তাদের নয়-নির্বাহী প্রশাসনের দায়িত্বহীনতারও ইঙ্গিত দেয়। জনগণ জানতে চায়, প্রশাসন নীরব কেন, আর সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত রেখে এই লটারির টাকাগুলো শেষ পর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available