কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারছিল ছেলে। তা দেখে ঠেকাতে যান বৃদ্ধ বাবা। এ সময় ছেলের আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবাকে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত ১১টার দিকে অসুস্থ বাবা মারা যান। আর বাবা মৃত্যুর খবর শুনে ছেলে গলাঁয় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি স্বজনদের।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের উদয় নাতুরিয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ওই গ্রামের শুম্ভু চরন বিশ্বাস (৮০) ও তার মেঝো ছেলে বিজয় কুমার (৩২)। তিনি পেশায় মাছ বিক্রেতা ছিলেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।
পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শুম্ভু চরন বিশ্বাসের ছাগল বিক্রি নয় হাজার টাকা নিয়ে পূজার কেনাকাটা করে ছেলে বিজয় কুমার। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বিজয় ফের টাকা চান বাবার কাছে। এ নিয়ে স্ত্রী মিনতির সঙ্গে বিজয়ের পারিবারিক কলহ বাঁধে। এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করলে তার বাবা ঠেকাতে যান।
এ সময় আঘাতে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে পল্লী চিকিৎসক ডেকে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর রাত ১১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শুম্ভু চরন। আর আজ শুক্রবার সকালে বাড়ির পাশের বাদাম গাছ থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয় স্বজনরা। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সুরতাল করে বাবা - ছেলের মরদেহ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বাগুলাট ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারছিল ছেলে। এ সময় ঠেকাতে গেলে বাবার শরীরে একটা আঘাত লাগে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মারা যায় শুম্ভু। আর বাবার মৃত্যুর খবর শুনে ছেলে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।
সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড ঘরের বারান্দায় পাশাপাশি রাখা রয়েছে বাবা ছেলের মরদেহ। পাশেই আহাজারি করছেন স্বজনরা। তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন প্রতিবেশী ও উৎসুক জনতা। তারা স্বজনদের শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেখানে আইনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে পুলিশ। নিহত শুম্ভুর বাম হাতে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
এ সময় নিহত শুম্ভুর ছোট ছেলে ও বিজয়ের ভাই বিজন কুমার বলেন, টাহা নিয়ে বাঁধিছিল। এ সময় বউ মারতি গিয়ে এটুফোটা মুরব্বীর গায় লাগিলি অসুস্থ হয়ছিল। ডাক্তার আনে চিকিৎসা দিছিলাম। তবুও রাতে মুরব্বী মারা গেছে। সেই অনুরাগে ভাই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এখানে অন্যকিছু নেই।
তবে নিহত বিজয়ের স্ত্রী মিনতি বলেন, পূজার চাঁদা দেওয়া নিয়ে বাবার সাথে দুই কথা বাধেছে। বাপ টাকার টেনশনে স্ট্রোক করে মারা গেছে। আর ওই জন্য মনের ভিতর খারাপ লাগেছে বলে ও (স্বামী) গলায় দড়ি নেছে। তার ভাষ্য, শ্বশুর মারা গেছে রাতে। আর স্বামীর মরার খোঁজ পাওয়া গেছে সকালে। রাতের স্বামী কোথায় ছিলেন তা তিনি জানেন না।
আর নিহত শুম্ভুর স্ত্রী বিলাসী বলেন, একবার ছাগল বিক্রির ৯ হাজার টাকা নিয়ে পূজার কেনাকাটা করেছিল বিজয়। আবার পরদিন ছেলে ফের টাকা চাইলে স্বামী শোকে স্ট্রোক করে। পরে রাতে মারা গেছেন। আর ছেলে গলায় দড়ি নিছে।
কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, ঝগড়াঝাঁটির জেরে বাবা ছেলের মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের দাবি বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছে। তবে মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত নয়। আর ছেলে গলাঁয় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। তাদের মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available