মাসুম লুমেন: মীরের বাগানের ঐতিহাসিক শাহ্ সুলতান গাজীর মসজিদ গাইবান্ধা জেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত। মসজিদে দেওয়ালে খোদিত লিপি থেকে জানা যায়- মসজিদটি স্থাপিত ১০১১ সালের। মসজিদের ভেতরে একটি কালোপাথর পাওয়া গিয়েছিল। তাতে ‘১০১১ই সাই’ উৎকীর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের কোনও এক সময় তা হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধান করেও এই কালোপাথরটির আর পাওয়া যায়নি।
মসজিদটি দীর্ঘদিন পতিত থাকার পর ১৯০০ সালে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী নামে এক দরবেশ এ মসজিদ ও মাজার খুঁজে বের করে সংস্কার করেন। মসজিদের পাশেই শাহ্ সুলতান গাজীর মাজার অবস্থিত। এখানে আরও ২ জন ইসলাম প্রচারকের মাজার আছে। মীর মোশাররফ হোসেন ও ইবনে শরফ উদ্দিন হোসেন।
দেশের অধিকাংশ গম্বুজ আলা মসজিদের মতো শাহ্ সুলতান গাজীর মসজিদটিও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিটি আয়তকার কিন্তু ৩টি বর্গের সমষ্টি। প্রতিটি বর্গের উপর একটি করে গম্বুজ। মাঝের গম্বুজটি অধিক কারুকার্য শোভিত ও একটু উঁচু। মুসল্লি বেড়ে যাওয়াই সামনে টিনের ছাউনি দিয়ে নামাজের স্থান বর্ধিত করা হয়েছে। পাশেই আজান দেবার জন্য দোতালা মিম্বার, চিকন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। একসময় মিম্বার থেকে আজান হলেও, এখন মসজিদের ভেতর থেকে মাইকে আজান দেওয়া হয়। বুঝতে কষ্ট হয় না- বেশ কয়েকবার সংস্কার হওয়াই- মসজিদটি তার আদি সৌন্দর্য হারিয়েছে। সব কিছুর পরেও এই আদি পুরাকীর্তি বাঁচিয়ে রাখার কৃতিত্ব কিন্তু এই গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর।
মসজিদ ও মাজারকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার ইতিহাস খ্যাত মীরের বাগানের ঐতিহ্যবাহি ইচ্ছা বা মানত পূরণের মেলা বসে। বৈশাখ মাসে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে মীরের বাগানের ঐতিহাসিক শাহ্ সুলতান গাজীর মসজিদ ও মাজারে। এখানে মাসব্যাপী ইচ্ছা পূরণের বৈশাখী মেলা বসে। প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে এই মেলায়। মেলায় অংশগ্রহণকারী সদস্যদের একটা বড় অংশ তাদের ইচ্ছা পুরণের মানত করেন । মেলার প্রথম দিন থেকেই নিজ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ইচ্ছা পূরণের আশায় ভিড় জমান এ মেলা প্রাঙ্গণে। মাজার ও মসজিদ নির্ভর মানুষগুলোর সে মানতের টাকায় পুরো বছর চলে এই প্রতিষ্ঠান।
মাজারের মোতওয়াল্লী (খাদেম) সূত্রে জানা গেছে, দারিয়াপুরের মীরের বাগানের সাথে ইতিহাস খ্যাত মীর জুমলার সম্পর্ক আছে বলে প্রচলিত রয়েছে। অতীতে বিশাল এক আমবাগানের জন্য এই মীরের বাগান প্রসিদ্ধ ছিল। ১৩০৭ সালে (তথ্যসূত্র: মসজিদ গাত্রের শিলালিপি) কলকাতার পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বাহারবন্দ পরগণার ঘন জঙ্গল থেকে পীর ইবনে শরফুদ্দিনের স্মৃতিবাহী কবর ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উৎঘাটন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন। ময়মনসিংহের ক্বারী করিম বক্সের উত্তরাধিকারীগণ বংশ পরম্পরায় মোতওয়াল্লী হিসেবে এই ওয়াকফ সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।
মীরের বাগানের পীর সাহেবের মাজার জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। স্থাপত্যকলার বিচারে মীরের বাগানের মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মমতের শিল্পরীতির বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়। সঠিক ঐতিহাসিক দিক পর্যালোচনার মাধ্যমে মীরের বাগান সামগ্রিকভাবে বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন কালের বিবর্তনের তথ্যে পূরণে সহায়ক হতে পারে ।
এখানে যাবেন যেভাবে: গাইবান্ধা শহর (ব্রিজ) থেকে প্রথমে দাড়িয়াপুর যেতে হবে, রিকশা বা অটোতে ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। সেখান থেকে মীরের বাগান শাহ্ সুলতান গাজীর মসজিদ যেতে রিকশা বা অটোতে ভাড়া পড়বে ৫ টাকা। রিকশা বা আটো রিজার্ভ নিয়ে গেলে যাওয়া-আসা ভাড়া পরে ৫০টাকা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available