• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে ভাদ্র ১৪৩২ রাত ১২:৪১:২৭ (13-Sep-2025)
  • - ৩৩° সে:
  • উপমহাদেশের খবর :
সংবাদ ছবি

ইসরাইলি সেনা ঘাঁটিতে ইয়েমেনের ‘সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’ হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরাইলি দখলকৃত এলাকায় সফল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আল-মাসিরাহ টিভিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট বৃহস্পতিবার একটি ‘প্যালেস্টাইন-২’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দখলকৃত নেগেভ অঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে।বিবৃতিতে অভিযানটিকে সফল বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ হামলার ফলে বহু ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।সারি আরও জানান, তাদের ড্রোন ইউনিট অতিরিক্ত দুটি অভিযান চালায়: যার একটিতে দুটি ড্রোন ব্যবহার করে এলাত (উম্ম আল-রাশরাশ) সংলগ্ন রামন বিমানবন্দরে, আরেকটিতে একটি ড্রোন দিয়ে নেগেভের আরেকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়।বিবৃতিতে হামলাগুলোকে গাজায় ইসরাইলি কর্মকাণ্ড ও ইয়েমেনের ভূখণ্ডে আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সারি জোর দিয়ে বলেন, ইয়েমেন ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।এর আগে হুথি আনসারুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, ইয়েমেনের পাল্টা অভিযান ইসরাইলি দখলকৃত ভূখণ্ডে দখলদার বাহিনী ও চরমপন্থি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য আর কোথাও নিরাপদ রাখবে না।হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি গণমাধ্যম সম্পর্ক পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আহনুমি বৃহস্পতিবার বলেন, রাজধানী সানার তাহরির স্কোয়ারে নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো জায়নিস্ট শাসনের  ‘ভয়াবহ অপরাধ’ কোনোভাবেই জবাবহীন থাকবে না।তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ইয়েমেনের পাল্টা হামলা সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর, বসতি স্থাপনকারীদের সমাবেশ ও অন্যান্য সংবেদনশীল স্থাপনাকে লক্ষ্য করবে।আবদুল্লাহ আল-আহনুমি ইয়েমেনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি অপরাধের দ্রুত ও যথাযথ জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে জায়নিস্ট সমাবেশগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো, তারা যেখানে থাকুক না কেন—বসতিতে, বিমানবন্দর লাউঞ্জে কিংবা অন্য কোথাও’।আল-আহনুমি জোর দিয়ে বলেন, ‘শত্রু বুঝতে হবে আমাদের জনগণের রক্ত মূল্যবান, আর এটি ঝরানো হলে আরও শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক হামলার সূত্রপাত ঘটবে’।এই বিবৃতি আসে একদিন পর, যখন ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও উত্তরাঞ্চলীয় আল-জওফ প্রদেশে একাধিক বিমান হামলা চালায়, যাতে প্রায় তিন ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও আরও ১৩০ জনের বেশি আহত হয়।ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবারের হামলায় সানার তাহরির পাড়ার বাড়িঘর, শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬০তম সড়কের একটি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং জওফ প্রদেশের রাজধানী হাজমের সরকারি ভবন লক্ষ্যবস্তু হয়।নাগরিক সুরক্ষা দল জানিয়েছে, তারা হামলার পর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।একজন জ্যেষ্ঠ ইয়েমেনি কর্মকর্তা আল-মায়াদিন টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান, ইসরাইলি হামলায় ২৬ সেপ্টেম্বর ও আল-ইয়েমেন পত্রিকার কার্যালয়ও ধ্বংস হয়, যেখানে কয়েকজন সাংবাদিক নিহত ও আহত হন।গত দুই বছরে অবরুদ্ধ গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসনের সময় ইসরাইল ইতোমধ্যে শত শত সাংবাদিককে হত্যা করেছে।জাতিসংঘও ইয়েমেনে অব্যাহত ইসরাইলি বিমান হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে সর্বশেষ হামলায় তাদের একটি কার্যালয়ের কাছাকাছি স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর।এই হামলা আসে কয়েকদিন পর, যখন ২৮ আগস্ট ইসরাইলি বিমান হামলায় সানায় ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালেব নাসের আল-রাহাউই এবং আরও কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হন।এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় গণহত্যামূলক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ইয়েমেনি বাহিনী একটি কৌশলগত সামুদ্রিক অবরোধ চালু করে, যাতে ইসরাইলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানো ঠেকানো যায় এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবিলায় আহ্বান জানানো হয়।পাশাপাশি, তারা ইসরাইল-দখলকৃত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ।ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল গাজায় স্থল ও আকাশ হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৬৪,৬৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। সূত্র: মেহের নিউজ