• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:৪৫:৩১ (12-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:৪৫:৩১ (12-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

মাদরাসার নিয়োগে সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১১:৫২:১০

মাদরাসার নিয়োগে সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জামুহালী চশমায়ে দ্বিমুখী আলিম মাদরাসায় নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা আগে শিক্ষক-কর্মচারীর ৫ পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার জামুহালী চশমায়ে দ্বিমুখী আলিম মাদরাসায় এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসার পর হঠাৎ করে সকাল নয়টার দিকে মাদরাসার মূল ফটকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ টাঙানো হয়। এ সময় মাদরাসায় শুধু একজন নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীরা কেউ ছিলেন না। পরীক্ষার্থীরা প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফিরে গেছেন।

নোটিশে বলা হয়েছে অনিবার্য কারণবশত ৫ পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থাগিত হয়েছে। তবে উপাধ্যক্ষসহ ৫ পদে নিয়োগে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় ৭০ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক-কর্মচারীর ৫ পদে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। বড়তারা ইউপি সদস্য রুহুল আমিন তার ফেসবুকে নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এরপর শুক্রবার পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা আগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বড়তারা ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন ও মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মো. রেজাউল করিম উপাধ্যক্ষসহ ৫ পদে নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্য, ‘ডিজির প্রতিনিধি আসেননি। তাই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’

এদিকে, শুক্রবার সকালে সরেজমিনে ওই মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, মাদরাসার মূল ফটক বন্ধ রয়েছে। মূল ফটকের দেয়ালে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে।’

মাদরাসার নিরাপত্তা কর্মী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ১০ টায় মাদরাসায় উপাধ্যক্ষসহ ৫ পদে নিয়োগ পরীক্ষা সকাল দশটায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। অধ্যক্ষ স্যার মাদরাসায় আসেননি। তিনি সকাল নয়টার দিকে আমাকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ পাঠিয়েছেন। আমি সকাল নয়টার দিকে মাদরাসার মূল ফটকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছি। ৫ পদের পরীক্ষার্থীরা মাদরাসায় এসে অপেক্ষা করে চলে গেছেন। আমি ছাড়া অন্য শিক্ষক কর্মচারীরা মাদরাসায় আসেননি।’

অফিস সহকারী পদে আবেদনকারী বড়তারা গ্রামের আরিফুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিয়োগ পরীক্ষার কথা ছিল। মাদরাসার ফটকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা অপেক্ষা করে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’

বড়তারা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার ওর্য়াডের জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষসহ পাঁচটি পদে লোক নিয়োগে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন ও মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের রেজাউল করিম প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যে করেছেন বলে জানতে পেরেছি। শুক্রবার তারা পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করতে চেয়েছিলেন। এ ঘটনা জানার পর নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে আমার ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলাম। পাশাপাশি ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারি কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলাম। এরপর শুক্রবার ৫ পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অনেকের কাছে নিয়োগের কথা বলে সভাপতি ও অধ্যক্ষ টাকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার কাছে টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

জামুহালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, আমার ছেলে মো. ফেরদাউস অফিস সহকারী পদে আবেদন করেছেন। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বড়তারা ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনকে প্রায় ২ বছর আগে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি নিয়োগ পরীক্ষার দুই দিন আগে আমার কাছে অফিস সহকারী পদের জন্য ১৬ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে চেয়ারম্যানকে বলেছি। তখন চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, টাকা যার চাকরি তার। একই পদে অনেকের কাছে টাকা নেওয়ার কথা শুনেছি।’

জামুহালী গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে মো. সৌরভ হোসেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করেছেন। মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে আমার ১৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিল। দুই মাস আগে অধ্যক্ষের কথামতো একজনার মারফতে প্রথমে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। এরপর নিশ্চিন্তা বাজারের একটি রড-সিমেন্টের দোকানে বসে অধ্যক্ষ সাহেব আমার কাছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। মোট ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন ওই পদে আরও বেশি টাকা পেয়ে অধ্যক্ষ সাহেব আমার ছেলেকে নিয়োগে গড়িমসি করছেন।’

বড়তারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন লতিফ বলেন, ‘৫ পদে ঘুষ বাণিজ্য করা হয়েছে। আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজনের দাবি করছি। যারা ঘুষবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বড়তারা ইউপির চেয়ারম্যান ও জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘মাদরাসায় জনবল নিয়োগে কারও কাছে একটি টাকাও নেওয়া হয়নি। কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। ডিজির প্রতিনিধি আসেননি। এ কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’

একই অভিযোগ অস্বীকার করে মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘উপাধ্যক্ষসহ ৫ পদে মোট ৪৮ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ৫ পদে মাদরাসায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ডিজির প্রতিনিধি আসছেন না বলে জানানোর পর পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’

ক্ষেতলাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছফিউল্লাহ সরকার বলেন, ‘জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষসহ ৫ পদে নিয়োগের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। শুধু নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের কথা জেনেছি।’

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ