• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১১:৫৬:৫৪ (14-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১১:৫৬:৫৪ (14-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

মাছ কেটেই চলে তাদের সংসার

রংপুর ব্যুরো: হামার ইনকাম বাপু নিজের হাতের কাছে। হাত যদি বেশি চালাইতে পারি ১০টাকা বেশি কামাই করি, না হইলে ১০টাকা কম। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রংপুর নগরীর কুকরুলের বাসিন্দা শেফালী বেগম। প্রায় ১০ বছর ধরে রংপুরের সিটি মাছ বাজারে কাজ করছেন তিনি।তার ভাষায়, ‘হামার গরম আর বর্ষা নাই। হাতে করি আর পেটে খাই, হামার কাজ না করি আর উপায় নাই। একদিন কাজ করতে না পারলে পেটে ভাত যায় না। এখানে অনেকেরই স্বামী নাই, সন্তানদের নিয়া অনেক কষ্ট! এক বেলা মাছ না কাটলে ভাত জুটে না। সকাল থাকি (থেকে) সন্ধ্যা পর্যন্ত যত কেজি মাছ কাটতে পারি সেভাবেই টাকা হয়।’সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কেটে দিয়ে প্রতিদিন শেফালির আয় হয় ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। তা থেকে জায়গা ভাড়া, ইজারা, পানির বিল ও ময়লা পরিষ্কারের বাবদ প্রায় ১শ’ টাকা দিতে হয় বাজার কর্তৃপক্ষকে। শেফালী বেগমের মত এই বাজারে প্রায় ৫০জন নারী উনুনের খড় পোড়ানো ছাই আর ধারালো বটি দিয়ে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন।৪ মে শনিবার সরেজমিন রংপুর সিটি মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি নানা বয়সী নারীরা মাছ কেটে দিচ্ছেন। ভ্যাপসা গরমে যে বয়সে ফ্যান বা হাতাপাখার বাতাসে গা জুড়ানোর কথা সেই বয়সে নিজে চলার পাশাপাশি অনেকে নিয়েছেন পরিবার চালানোর মতো গুরু দায়িত্ব।কথা হয় সিটি বাজারে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করা সংগ্রামী নারীদের সাথে। তারা জানান, এই বাজারের মাছ কাটা নারীদের অনেকেই বিধবা, বয়স্ক কেউবা অভাবের সংসার চালাতে এসেছেন এ পেশায়। আর মাছ ভেদে প্রতি কেজির বিনিময়ে নেন ১০ থেকে ৫০ টাকা।ষাটোর্ধ্ব রাবেয়া বেগম নামে এক নারী জানান, এই বাজারেই মানুষের মাছ কেটে পরিবার চালানোর পাশাপাশি মেয়ের বিয়ে ও নাতি নাতনির পড়াশোনা খরচ চালাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও নিজের অসুস্থতায় চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিদিনই ১শ’ থেকে দেড়শ টাকার ঔষধও কিনছেন তিনি।রাবেয়া বেগম বলেন, প্রতিদিনের যে আয় হয় তা দিয়ে চলছি। কিন্তু যদি স্থায়ী কোন জায়গা রদেয়া হতো তাহলে ভালো হতো। পাশাপাশি এই যে প্রতিদিন ১শ’ টাকার মত দেওয়া লাগে সেটাও যদি মওকুফ করে দেয়া হতো অনেকেরই সংসার আরও ভালোভাবে চলতো।এই তীব্র গরমে শরীরের ঘাম আর পানিতে একাকার হয়ে মাছ কাটছেন ফরিদা বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে গরম বাবা হামারগুলার কষ্ট দেখে কাই। চেংড়ি বয়স হাতে স্বামী নাই। তখন থাকি এই বাজারে মাছ কুটি। মোর বাড়ি বলতে এই বাজারেই। মাথা গোছার কোনো ঠাঁই নাই। সকালে আসি। যা টাকা পাই তাই দিয়া খাই। হামার কষ্টের বাকি দিন এইতন (এমন) করিয়া যাইবে।মোতাব্বেরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের মত যারা ছোট মাছ প্রিয়, কিন্তু পরিবারের লোকেরা তো অত্যন্ত ব্যস্ত। ছোট মাছ বাড়ি নিয়ে গেলে মা, বোন বা বউয়েরা মাছ কাটতে অপারগতা প্রকাশ করে ফলে এনারাই আমাদের ভরসা। তারা মাছ কেটে দিচ্ছেন বলেই ছোট মাছের স্বাদ নিতে পারছি।জাহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, তাদের এই পেশাটা অনেক ভালো। তারা কাজ করে খাচ্ছেন। তারাও আয় করে সংসার চালাচ্ছেন, আমাদেরও সুবিধা হচ্ছে। তবে রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মাথার উপর টিনশেড করে দেয়া হলে ভালোভাবে কাজ করতে পারতো তারা।